খাগড়াছড়ির তিন ‘পৌরসভা’ নির্বাচনে লড়বে বিএনপি
ওয়ান-ইলেভেনের মতো ঝড়সহ নানা প্রতিকুলতায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খাগড়াছড়িতে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। বিএনপির ক্ষমতার বদৌলতে ব্যবসা-ঠিকাদারী-জায়গা-চাকরিসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া নেতাদের অধিকাংশই এখন লাপাত্তা। পদ-পদবিতে ছিলেন, এমন অনেকেই এখন বিএনপির মূল স্রোতের বিপরীতে। নানা প্রতিকুলতার সঙ্গে লড়তে গিয়ে তৃণমূলের অনেকে হয়েছেন দলছুট অথবা নৌকার মাঝি।
টানা আট বছরের ঝড়ঝঞ্ছায় খাগড়াছড়ি বিএনপির নেতৃত্বও অনেকটা পর্যদস্ত হলেও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলার দুইটি উপজেলা পরিষদেরর চেয়ারম্যান ও চারের অধিক উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের কথা জানান দিতে সক্ষম হয় বিভিন্ন সময়ে সরকারে থাকা এ দলটি।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলকে মূল্যায়ন করেই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে জেলার তিনটি পৌরসভাতেই পূর্ণ-প্যানেলে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে জেলার খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড়ে প্রার্থী দেয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক ও বিএনপির এক বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে মাটিরাঙ্গায় মেয়র পদে জয়ী হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবু ইউসুফ চৌধুরী। এখানে সর্বাধিক সংখ্যক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে আসে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
অন্যদিকে দাঙ্গা-হাঙ্গামাপূর্ণ রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে স্বল্প ভোটে পরাজিত হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। আর ভোটের পাল্লা ভারী হলেও রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই ওই নির্বাচনে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিলনা। তবে সর্বাধিক সংখ্যক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে আসে বিএনপি সমর্থিতরা।
খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে পৌর বিএনপির সভাপতি ও টানা দুইবারের কাউন্সিলর মো. আব্দুর রব রাজা, টানা তিনবারের কাউন্সিলর এ.টি.এম. রাশেদ উদ্দিন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্টু এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অনিমেষ দেওয়ান নন্দিতের নাম আলোচিত হচ্ছে মেয়র পদে। এর বাইরেও বিএনপি ঘরানার ‘মারমা সংগঠন ঐক্য পরিষদের এক প্রভাবশালী নেতাকে বিএনপি সমর্থন দিতে পারে বলে জেলা শহরে জোর গুঞ্জন রয়েছে।
জেলায় বিএনপির ঘাটি বলে বিবেচিত মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ চৌধুরীকেই দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা দেখতে চান। তবে নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত মাটিরাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বাদশা মিয়া দলের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের সমর্থন পেতে কাজ করছেন। পাশাপাশি সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের অনুকম্পা পেতেও নানা চেষ্ঠা-তদবীর করছেন বিএনপির এ নেতা। এদিকে দল চাইলে মেয়র পদে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মো. নুরুল আলম রানা।
অন্যদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য রামগড় পৌরসভায় আশির দশক থেকেই ‘ভূইয়া’ পরিবারের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। নানা কারণে ‘ভূইয়া’ পরিবারকেই নিজেদের অভিভাবক মনে করেন রামগড়ের বাসিন্দারা। আর সেই কারণে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে এই পরিবারেরই কাউকে দেখতে চায়, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আগামী পৌরসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক কৌশল কি হবে সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, দলের যেসব নেতৃবৃন্দ মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নিজেদের যোগ্য মনে করেন তারা দলের সমর্থন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
খাগড়াছড়িতে অতীতে কখনো বিএনপির নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকরা সংকটে ছিলনা উল্লেখ করে আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সুবিধার সন্ধানে অনেকে স্বেচ্ছায় পালালেও তৃণমূলে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। তৃণমূলের মতামতের উপর ভিত্তি করেই খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনিত করা হবে।
এমএএস/পিআর