‘স্যার, কারো মাধ্যমে টাকা নিতে পছন্দ করেন না’
বগুড়া জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের পদায়ন দেয়া নিয়ে চলছে ব্যাপক ঘুষ-বাণিজ্য।
অভিযোগ উঠেছে পছন্দনীয় বিদ্যালয়ে পোস্টিং পেতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ লেনদেন করতে হচ্ছে। পোস্টিং নেয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা কর্মকর্তার বাসায় শিক্ষকদেরকে ধরনা দিতে দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় ২৯৫ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে পদায়নের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোয়ারা ইশরাত স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে চলতি দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের পদায়ন দিতে বলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত চিঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আসার পর থেকেই পছন্দনীয় বিদ্যালয়ে পোস্টিং নেয়ার জন্য শিক্ষকদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর শহরের সুত্রাপুরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের ভাড়া বাসার সামনে তদবরি করতে আসা শিক্ষকরা জানান, তারা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আগে থেকে তদবির না করলে পছন্দনীয় বিদ্যালয়ে পোস্টিং হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তারা বিভিন্ন উপজেলা থেকে রাতেই চলে এসেছেন।
বুধবার সকাল ১০টার আগেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। সেখানে পরিচয় গোপন করে কথা হয় সারিয়াকান্দি উপজেলার নিজ বলাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন, খোর্দ্দ বলাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল, দুপচাচিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরে আলম ছাড়াও বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে।
তারা জানান, পছন্দনীয় বিদ্যালয়ে পোস্টিং নিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। টাকা কে নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষকরা জানান, ‘স্যার কারো মাধ্যমে টাকা নিতে পছন্দ করেন না।’
অফিসে কিছু সময় অপেক্ষা করে দেখা গেলো একজন করে শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের রুমে যাচ্ছেন এবং তদবির শেষে হাসিমুখে বের হচ্ছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষক জানান, তাদের উপজেলায় ২৮ জন শিক্ষকের পদোন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষকের কাছ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নামে ২০ থেকে ৩০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন সেখানকার একজন শিক্ষক নেতা। টাকা দেয়ার পর পছন্দনীয় বিদ্যালয়ে তাদের পোস্টিং হচ্ছে কি-না তা জানতে শিক্ষা অফিসের কম্পিউটার অপারেটর দেলোয়ার হোসেনের কাছে খোঁজ নিতে এসেছেন তারা।
বিদ্যালয় চলাকালে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষকরা এর জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী জানান, তদববির করতে শিক্ষকরা তার বাসায় এবং অফিসে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কোনো শিক্ষকের সঙ্গে টাকা লেনদেন করেননি। তদবির করতে আসা শিক্ষকদের তিনি বলেছেন, নীতিমালার বাইরে কিছু করা যাবে না। এছাড়া তদবির ঠেকাতে তিনি বাসায় বলে দিয়েছেন, কোনো শিক্ষক যেন তার রুমে ঢুকতে না পারে।
লিমন বাসার/এএম/জেআইএম