বাচ্চু হত্যার কূল খুঁজছে পুলিশ
প্রথাবিরোধী লেখক, ব্লগার, কবি ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে মুসীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার পূর্ব কাকালদি গ্রামের মুন্সীগঞ্জ-শ্রীনগর সড়কে গুলি করে হত্যা করে ৪ দুর্বৃত্ত। এরপর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবকয়টি ডিপার্টমেন্ট এই মামলার তদন্তের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ৭ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও তেমন কোনো কূল পায়নি প্রশাসন। এখনো অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি।
গত সোমবার (১১ জুন) বিকেলে একটি ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন শাহজাহান বাচ্চু। পরবর্তীতে তিনি পূর্ব কাকালদির একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে সময় কাটাতে থাকেন। ইফতারির কিছু সময় আগে দুটি মোটরসাইকেলে করে ৪ জন যুবক এসে সড়কে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং বাচ্চুকে দোকান থেকে বের করে গুলি করে হত্যার পর চলে যায়। ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও হত্যার এ ঘটনায় তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অনেকটাই হতবাক নিহতের পরিবার।
বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রী আফসানা বেগম বলেন, বাচ্চুর সঙ্গে কারোরই কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। দুটি সংসার থাকা সত্ত্বেও সবাইকে সন্তুষ্ট রেখেই জীবন-যাপন করছিলেন তিনি। ঘটনার দিন হটাৎ বিকেলে একটি ফোনকল পেয়ে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা অবস্থায় বাসা থেকে বেরিয়ে যান। প্রথম খবর আসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ওকে মেরে ফেলেছে। বিশ্বাস করে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪ জনকে আসামি করে সিরাজদিখান থানায় মামলা দায়ের করি। কিন্তু ৭ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। আমরা রিতিমত আতঙ্কে ভুগছি।
কয়েক বছর আগে পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের বিশাকা প্রকাশনার মালিকানা বিক্রি করে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন প্রকাশক বাচ্চু। মাস ছয়েক আগে তেঁতুলিয়ার বাড়ি বিক্রি করে নিজ বাড়িতে বসবাসের জন্য দুটি কক্ষের একতলা একটি বিল্ডিং তৈরি করেন। কিন্তু এই ঘরটিতে থাকা হয়নি তার।
বাচ্চুর মেয়ে আচল জাহান বলেন, বাবা মুক্তমনা ব্লগ ও ফেসবুকে লেখালেখি করতো। সেই সূত্রে বাবার সঙ্গে নিহত ব্লগার অভিজিৎ, নিলয় ও আশিকুর রহমান বাবুর সম্পর্ক ছিল। হয়তো আঙ্কেলদের যারা মেরেছে বাবাকেও তারা মেরেছে। বাবার লেখালেখির কারণে জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও ব্লগে হুমকি দিতো। তাছাড়া বহুবার ফোন করেও হুমকি দিয়েছে যে, ‘লেখালেখি বন্ধ না করলে তোকে ও তোর সন্তান, স্ত্রীদের হত্যা করা হবে’।
তিনি বলেন, আমাদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধের কারণেও এ হত্যা হতে পারে। কারণ আগে আমার চাচা, দাদাসহ ৪ জনকে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের কারণে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের লাশও পাওয়া যায়নি। এখন রীতিমতো ভয়ে ভয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। কারণ বাবার হত্যাকারীরা যদি এখন আমাদের টার্গেট করে। আমরা চাই প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক হত্যাকারীদের বের করুক।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক হামিদা খাতুন জানান, মুক্তমনা লেখক শাহজাহান বাচ্চু স্পষ্টবাদী সাদামাটা একজন লোক ছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার লেখনির কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যার ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবকটি টিম এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করছে। আমরা দুটি দিক নিয়েই এগুচ্ছি। প্রথম দিকটি হলো পারিবারিক কোনো সমস্যা আছে কিনা। অপরটি তার লেখালেখির কারণে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে নিরুপণ করা যায়নি এখনও। তবে তিনি যেহেতু লেখালেখি করতেন তাই জঙ্গির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আশা করা যায় খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এর সমাধান করতে পারবো।
ভবতোষ চৌধুরী নুপুর/এফএ/জেআইএম