আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণায় গাজীপুর
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার তাদের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।
এর আগেই প্রার্থীরা তাদের কর্মপরিকল্পনা কেন্দ্র অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঈদের আনন্দ বিনোদন সংক্ষিপ্ত করে আজ থেকে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় মনোনিবেশ করছেন নেতাকর্মীরা।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগুচ্ছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, ১৫ মে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল আইনি জটিলতায় তা প্রায় দেড়মাস পিছিয়ে ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে আরও সুসংগঠিত হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে বিবেদ ও অনৈক্য ছিল সেটা কাটিয়ে উঠেছে। ৫৭টি ওয়ার্ডেই নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার করেছেন জাহাঙ্গীর আলম, মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
তাছাড়া দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনায় জেলার সব নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে কাজ করছেন দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে। দলীয় প্রধানের নির্দেশেনার পর নেতাকর্মীরা অনেকেই প্রার্থীর চাইতে দলীয় প্রতীককেই এগিয়ে রাখছেন।
রোববার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জেলার মন্ত্রী এমপিসহ মহানগরীর সবকটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা নৌকার পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
অপরদিকে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচনী প্রচার সেল সূত্র জানায়, রোজার মধ্যেই গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রার্থীসহ গাজীপুর বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সেখানে নেয়া সিদ্ধান্ত মতো এবার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে কাজ করার কথা জানানো হয়েছে। মামলা নেই এমন নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে এজেন্ট করা হবে।
এছাড়া কেন্দ্র থেকে আগের চাইতে আরো বেশি সংখ্যক নেতা গাজীপুরে পাঠানো হবে। নির্বাচনের পুরো বিষয়টি কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হবে। তারা নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র করা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল জানান, খুলনা ও গাজীপুরের অবস্থা এক নয়। গাজীপুরে খুলনার মতো করতে চাইলে গাজীপুরের জনগণ তা প্রতিহত করবে। আর এ জন্য সকল দায় সরকারে ঘাড়েই পড়বে।
তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তারা সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী দলীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে চোখ কান খোলা রাখার জন্য। সকলকে কৌশলী ও সতর্ক হয়ে চলারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তা কেন্দ্রকে জানাতে বলা হয়েছে।
গাজীপুর সিটিতে সোমবার সকাল থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল থেকে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সার আহমাদ সরকার জানান, তার ওয়ার্ডের বেশিরভাগই শ্রমিক ভোটার যাদের অনেকেই ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এখনও ফিরে আসেননি। তাই কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনেক ভোটারকে পাচ্ছেন না।
একই কথা জানালেন কোনাবাড়ি এলাকার সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মিসেস শিরিন চাকলাদার। তিনিও বলেন, শিল্প সমৃদ্ধ কোনাবাড়ি এলাকার হাজার হাজার শ্রমিক এখনো গ্রামের বাড়িতে ঈদ করছেন। আগামী শনিবার থেকে অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দেবেন। তবে নির্বাচনের আগে সকল শ্রমিক ভোটারই গাজীপুরে ফিরে আসবেন বলে তিনি আশা করছেন।
তারা জানান, ২৩ জুনের মধ্যে শ্রমিকরা ঈদের ছুটি শেষে গাজীপুরে ফিরে আসলে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ হবে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমের মিডিয়া সেল জানায়, সোমবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে জাহাঙ্গীর আলম দিনব্যাপী গাছা সাংগঠনিক থানা এলাকায় গণসংযোগ ও পথ সভায় বক্তব্য দেবেন। এছাড়া ৫৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ গণসংযোগে অংশ নেবেন এবং নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা এবং আধুনিক গাজীপুর সিটি গড়ার জন্য নৌকায় ভোট দিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন।
বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সকালে কাশিমপুর এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে তিনি কাউলতিয়া এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করবেন। এছাড়া ৫৭টি ওয়ার্ডে স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারও প্রচারণায় অংশ নেবেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় হাইকোর্টে রিট হলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।
পরবর্তীতে দুই মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও জাহাঙ্গীর আলম এবং নির্বাচন কমিশন এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ নির্বাচনের স্থগিতাদেশ তুলে দেন। ফলে নির্বাচন কমিশন ২৬ জুন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে।
গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। মোট মেয়র প্রার্থী ৭ জন। ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ২৫৬ জন ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৮৪ জন।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম