শোলাকিয়া ময়দানে নিরাপত্তায় থাকছে ড্রোন
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রশাসন। এখানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি। এ দিকে প্রথমবারের মতো নিরাপত্তা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন। এ ছাড়া দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকছে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস।
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বদিকে নরসুন্দা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো শোলাকিয়া ঈদগাহের অবস্থান।
এবার শোলাকিয়ায় ১৯১ তম ঈদ-উল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। এরই মধ্যে মাঠ সংস্কারের কাজসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর এখানে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষের ঢল নামে।
এ দিকে ঈদ জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। ২০১৬ সালে শোলাকিয়া মাঠের পাশে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিষটি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে আর্চ ওয়ের ভেতর দিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হবে। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি থাকছে ৫ প্লাটুন বিজিবি। ঈদগাহ ও আশপাশের এলাকাকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করে বসানো হবে ২৪টি নিরাপত্তা চেকপোস্ট। মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে থাকছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। নামাজের আগে পুরো মাঠ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সুইফট কারা হবে। এর মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রন নিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ খান জানান, ঈদের দিন র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে থাকছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশী করা হবে। মাঠের চারপাশে থাকবে বিজিবি সদস্যও। নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, চারস্তরের নিরাপত্তায় বলয়ে পুরো এলাকাকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করে ২৪টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫ প্লাটুন বিজিবি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে সাজানো হয়েছে। মাঠের চারপাশ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এবার শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ শেষ হবে বলেও আশা করেন তিনি। নামাজের জন্য পাতলা জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিতে পারবেন না মুসল্লিরা।
জনশ্রুতি আছে, কোনো এক ঈদের জামাতে শোলাকিয়ায় এক লাখ ২৫ হাজার বা সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।
১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য জমি ওয়াকফ করেন, ঈশাখার বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খান। তারও দুইশ বছর আগে থেকে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রায় ৭ একর জমির উপর অবস্থিত শোলাকিয়া মাঠের পশ্চিম সীমারেখা উত্তর-দক্ষিণে ৩৩৫ ফুট এবং পূর্ব সীমা রেখা উত্তর দক্ষিণে ৩৪১ ফুট, উত্তর সীমারেখা পূর্ব পশ্চিমে ৭৮৮ ফুট এবং দক্ষিণ সীমারেখা পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৪ ফুট।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ জানান, মুসল্লিদের যাতায়তের সুবিধার্থে ঈদের দিন ভোরে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন কিশোরগঞ্জ আসবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভৈরব থেকে ভোর ৬টার দিকে একটি ট্রেন শোলাকিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। পৌঁছবে সকাল ৮টায়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা অপর ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়। নামাজ শেষে সকাল ১২টায় ট্রেন দুটি আবার মুসল্লিদের নিয়ে ময়মনসিংহ ও ভৈরব ফিরে যাবে।
নূর মোহাম্মদ/আরএ/জেআইএম