ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঈশ্বরদী রেলওয়ের লোকোমোটিভ রানিং শেডের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৪:৫২ এএম, ০৩ আগস্ট ২০১৫

রেলওয়ের ইঞ্জিন সংস্কার ও মেরামত করে ট্রেন পরিচালনার জন্য পাকশী রেল বিভাগে ঈশ্বরদী, পার্বতীপুর ও খুলনা স্টেশনে তিনটি ডিজেল লোকোমোটিভ রানিং সেড রয়েছে। এরমধ্যে ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ রানিং শেড বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নির্মাণের ৯০ বছর পরও লোকমোটিভ শেডের উল্লেখ্যযোগ্য সংস্কার বা মেরামত হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ রানিং শেড থেকে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল স্টেশনের মধ্যে চলাচলকারী যাত্রী, মালবাহী ও উদ্ধারকারী ৬৮টি ট্রেনের মেরামত, সংস্কার ও ফুয়েলিং (তেল সংগ্রহ) করা হয়ে থাকে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য এখন পর্যন্ত কোন প্রকল্প নেওয়া হয়নি।
 
সংশ্লিষ্ট রেল সূত্রে জানা যায়, শহরের ফতেমোহাম্মদপুরে ১৯২১ সালে নিজস্ব পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর রেলওয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ লোকোমোটিভ শেড নির্মাণ করা হয়। ইঞ্জিন, কারখানার যন্ত্রপাতি, জমি, স্থাপনাসহ এখানে রয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার রেলসম্পদ। ৪৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক রয়েছে এখানে। শেডের ভেতরে রয়েছে ১০টি রেললাইন।

এখানকার শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেলইঞ্জিন মেরামত ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আলাদাভাবে একটি ডক নির্মাণের জন্য বহুবার ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হলেও কাজ হয়নি।



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা জানান, হালকা কাজের জন্য দুটি সিডিউল ডক রয়েছে। কিন্তু বড় ধরনের সংস্কারের জন্য এখানে পৃথক একটি ডক নির্মাণের প্রয়োজন থাকলেও আজও তা করা হয়নি।

শেডের অপর একজন কর্মকর্তা  জানান, সীমাহীন কষ্টের মধ্যে তাদের এখানে কাজ করতে হয়। বৃষ্টির দিনে শেড এলাকায় হাটু পানি জমে যায়। এ সময় ইঞ্জিন মেরামত করা যায়না। কারণ ইঞ্জিন থেকে তেল নিচে পড়ে থাকে। ফলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে তেল মিশে শেড এলাকা পিচ্ছিল হয়ে যায়। অনেকে হুমড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। শেডে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সে সময় মেরামত কাজ বন্ধ রাখতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশাল এই শেডের চাল (টিন) লাগানোর পর থেকে এ পর্যন্ত সেগুলো বদলানো হয়নি। এখন সেগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। পানি পড়ে শেড এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শেডে নিয়মিত পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। সামনের একটি পাম্প থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয় বলে জানা যায়।

শ্রমিক রহমত জানান, বৃট্রিশ আমলে স্থাপিত এই পাইপগুলোর ভেতরে মরিচা জমে থাকায় পানির চাপ কম। ফলে ইঞ্জিনে পানি দেয়ার জন্য শ্রমিক ও কর্মচারীদের দ্বিগুণ সময় কেটে যায়। অনেক সময় ময়লা-আবর্জনা যুক্ত পানির কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ এই শেডের পুরো এলাকায় আলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। শেডের সব মার্কারি বাল্ব দুই বছর ধরে নষ্ট।

সরোজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শেডের সীমানা প্রাচীর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। শেডের ভেতরে ১০টি রেললাইনের স্লিপারও নষ্ট হয়ে গেছে। লাইনগুলোতে পাথর নেই। ফলে মেরামত করতে আসা ইঞ্জিন অনেক সময় শেডের ভেতরেই লাইনচ্যুত হয়ে যায়।

শ্রমিকেরা জানান, দীর্ঘ ৯০ বছর আগের যন্ত্রপাতি দিয়ে তারা ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করছেন। এসব যন্ত্রপাতির কোনটি ভেঙে গেছে আবার কোনটি অচল।

এ ব্যাপারে শেডের ইনচার্জ এবং সহকারী যান্ত্রিক প্রকৌশলী জানান, বাজেট সল্পতার কারণে তেমন কিছু করা যাচ্ছেনা। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সেডে প্রযোজনীয় লোকবল নেই। নিরাপত্তা প্রহরীর প্রয়োজন সাতজন, কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র তিনজন।

তিনি আরো জানান, রেলের কেউ অবসর নিলে সেখানে আর নতুন লোককে নিয়োগ দেয়া হয়না। আর এ ব্যাপারে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

আলাউদ্দিন আহমেদ/এআরএ/এমএস