ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০৯:০৩ এএম, ১২ জুন ২০১৮

গত তিনদিন ধরে কক্সবাজারের সর্বত্র ভারি বর্ষণ চলছে। অতিবৃষ্টির ফলে জেলার মিঠাপানির তিন নদী চকরিয়ার মাতামুহুরি, ঈদগাঁওয়ের ফুলেশ্বরী ও কক্সবাজারের বাঁকখালীতে নেমেছে পাহাড়ি ঢল। ঢলের তীব্রতায় ভেঙে গেছে ঈদগাঁওয়ের নদীর বাঁশঘাটা ও পোকখালী এলাকার বাঁধ। এতে প্লাবিত হচ্ছে বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের পোকখালী ও ইসলামাবাদ এলাকার বেশ কিছু গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠ।

ভাঙনের কবলে পড়েছে অভ্যন্তরীণ সড়কও। প্লাবিত হয়েছে জালালাবাদ, ঈদগাঁও, চৌফলদন্ডী ও কালিরছরা এলাকার বিস্তৃর্ণ এলাকা। কক্সবাজার শহর, চকরিয়া, পেকুয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে একই অবস্থা বিরাজ করছে। গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত মানুষ।

শনিবার থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনদিনের গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে প্রায় ১১৪ মিলিমিটার। এর মাঝে রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২৩০ মিলিমিটার। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ফলে ঢলের তীব্রতা বাড়ছে। এ কারণে নামতে পারছে না সমতলের বৃষ্টির পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে জেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ।

cox02

এছাড়াও সোমবার ভোররাতে অতিবৃষ্টিতে মাটির দেয়াল চাপায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-৩ এফএফ জোনের বাসিন্দা আবদু শুক্কুরের তিন বছরের শিশু সন্তান আবদুর রহমান হারেছ মারা গেছে। এ সময় তার মা আছিয়া খাতুনও (৩৫) আহত হন।

আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার স্টেশনের কর্মকর্তা মুজিবুল হক জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে শনিবার থেকে কক্সবাজার জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা হতে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৯৪ মিলিমিটার। আর রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৩০ মিলিমিটার এবং সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় ১৬ মিলিমিটার। দিনের বেলা বৃষ্টিপাত কম হলেও থেমে থেমে বর্ষণ হয়। সন্ধ্যার পর থেকে রাতে আবারও ভারী বর্ষণ অব্যাহত ছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস মতে এভাবে বর্ষণ আরও দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সঙ্গে পাহাড় ধসেরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে বর্ষণ অব্যাহত থাকায় লোকালয়ে পানি ঢুকছে। প্লাবিত হচ্ছে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন, ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া, খরুলিয়া, দরগাহপাড়া, পোকখালীর মধ্যম পোকখালী, নাইক্ষংদিয়া, চৌফলদন্ডী, নতুনমহাল, ঈদগাঁও বাজার এলাকা, কালিরছড়া, রামুর উপজেলার ধলিরছরা, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, উত্তর মিঠাছড়ি, পূর্ব ও পশ্চিম মেরংলোয়া, চাকমারকুল, কলঘর, লিংকরোড়, চকরিয়া পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

cox03

চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আমান চর, কাজির পাড়া,২নং ওয়ার্ডের জেলে পাড়া, হালকাকারা, মৌলভীর চর, ৩নং ওয়ার্ডের তরছ পাড়া, ও ৮নং ওর্য়াডের নামার চিরিংগা, কোচ পাড়া, ও ৯নং ওয়ার্ডের মৌলভীর কুমসহ অনেক স্থানে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। মালুমঘাট, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, ফুলছড়ি, ইসলামপুর ও পেকুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি থৈ থৈ করছে। অপরদিকে জোয়ারের পানির সাথে বৃষ্টির পানি ভোগান্তি বাড়িয়েছে উপকূলবাসীর।

ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক জানান, ভারি বর্ষণে ঈদগাঁও নদীতে তীব্র বেগে ঢল নেমেছে। রোববার বিকেলে বাঁশঘাটার কাঠের সাঁকোটি ঢলে ভেসে যায়। আর সোমবার ভোরে ভাঙনের কবলে পড়ে ঈদগাঁও-গোমাতলী সড়ক কাম বাঁশঘাটা এলাকার নদীর বাঁধ। এতে বেশকিছু দোকানপাট তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে সড়ক যোগাযোগ।

উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, ঢলের তীব্রতায় পশ্চিম পোকখালীর সাহেবানির চর এলাকার বেডিবাঁধ ভেঙে বিশাল এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহিম জানান, ভারি বর্ষণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ঢলের পানি ঢুকে তার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হচ্ছে।

cox04

বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, পানির প্রবাহ বাড়ায় তার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।

কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বলেন, তাদের ইউনিয়নে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, ঢলের কারণে উপজেলার চিংড়িজোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে মাছ ভেসে গিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে চিংড়িজোনের হাজারো চাষি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মো. শিবলী নোমান জানান, উপজেলার বরইতলী ও কাকারা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এভাবে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধস ও নদী ভাঙনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

cox05

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানান, চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর তীরের কন্যারকুম, কইজ্যারদিয়া, পুরুত্যাখালী এলাকার বেড়ি বাঁধের কিছু অংশ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে।

এদিকে ভারি বর্ষণে চরম আতঙ্কে রয়েছে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় পাহাড়ে বসতি গড়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা। ক্যাম্প এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাড়ি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ আতঙ্ক সর্বময় ছড়িয়ে পড়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, অতিবর্ষণে পাহাড় ধস বা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থানীয়দের রক্ষার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/পিআর

আরও পড়ুন