কক্সবাজারের সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল
কক্সবাজারে মহা ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলছে। ফিটনেসহীন যানবাহন, আনাড়ি চালক ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণে শুধু দূরপাল্লায় নয়, শহরের ভেতর এবং গ্রামের উপ-সড়কেও একের পর এক দুর্ঘটনায় নিভে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। গত পঁয়ত্রিশ দিনে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে শতাধিক লোক। তাদের মাঝে অনেকে পঙ্গুত বরণ করেছেন।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মে মাসে এ জেলায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় শিশু-নারী ও পুরুষ মিলে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ মে একজন, ১৮ মে এক, ১৩ মে ৩, ১২ মে ২, ১০ মে ২, ৯ মে ২, ৩ মে ২ ও ২ মে ২ জন প্রাণ হারান। এ ছাড়া ৭ জুন রাতে মারা গেছেন ২ জন আর ২ জুন মারা যান একজন।
টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত বডুয়া বলেন, ১৮ মে চট্টগ্রামে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছরা ইউপির তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান মুনির আহমদ। তিনি ১২ মে হিমছড়ি এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। আর ১৩ মে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের হোয়াইক্যংয়ের কানঞ্জরপাড়া মসজিদের সামনে ম্যাজিকগাড়ীর ধাক্কায় একই গ্রামের জাফর আলমের ছেলে মোটর সাইকেল আরোহি মেহেদী হাসান (২০) নিহত হন।
কুতুবদিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস জানান, ১২ মে রাতে কুতুবদিয়ার দরবার রাস্তা মাথায় দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার গৌরাঙ্গ প্রকাশের ছেলে রঞ্জিত প্রকাশ লালু (৪৫) ও নয়াপাড়া এলাকার শাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক (২০) নিহত হন। এ সময় রাজীব চাকমা নামে অপর আরেকজন আরোহী আহত হন।
মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো.আলমগীর হোসেন আরও জানান, ১০ মে সকালে চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বালুভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ভূবনখিল গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রিফাত উদ্দিন (৮) নিহত হন। আহত হন আরও ৫ জন। একই দিন বিকেলে খেলতে গিয়ে সদর উপজেলার ইসলামপুর খেলারমাঠ এলাকায় যাত্রীবাহি বাসের ধাক্কায় নাপিতখালী এলাকার মালেশিয়া প্রবাসী আমান উল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ কাউছার (৭) নিহত হন।
পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, ৯ মে রাতে পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যাঘোনা এলাকায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা উল্টে ৮ মাস বয়সী মো. সামির মারা যায়। এ সময় তার ভাই মো. আবিদ (২) ও মা শাহেদা বেগম (৩২) আহত হন।
১৯ মে উখয়িার কুতুপালং এলাকায় ট্রাকচাপায় টমটম চালক রিদুয়ানুর রহমান বাবু (১৮) মারা যান। এ সময় একই এলাকায় জালাল আহমেদের ছেলে আবদুল আলম (২৮) ও ছৈয়দ আহমদরে ছেলে শাহ আলম (১৫) আহত হন। আর ৯ মে দুপুরে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা এলাকায় মিনিবাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে মো. সোলতান নামে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। আহত হন আরও ২ জন।
টেকনাফ থানার ওসি রনজিত বড়ুয়া জানান, ৩ মে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কাস্টম এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মো. নছু মিয়া (১২) ও খালেদ হোসেন (১৬) নামের দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কক্সবাজার অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, দক্ষতা পরীক্ষা করে লাইসেন্স প্রদান আমাদের কাজ। তবে কারা লাইসেন্সধারি আর কারা অবৈধ এ সব দেখার জন্য আলাদা সংস্থা রাস্তায় কর্মরত রয়েছে। কিন্তু কথা হলো রাস্তা চলতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) বাবুল চন্দ্র বণিক বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে চালক-যাত্রী সবার সচেতনতা দরকার। চালকরা দেখে শুনে চালালে আর যাত্রীরা স্পিডে চালাতে উৎসাহ না দিলেই দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক সভাও করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সহীন চালকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেয়া আছে। শুধু এটি করলে হবে না, সমাজের সবাইকে এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএ/এমএস