ছাতনীর সেই গণহত্যা আজও নাড়া দেয় এলাকার মানুষকে
সোমবার ছিল নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস। একাত্তর সালের এদিন গভীর রাতে হানাদার বাহিনীসহ কয়েকশ বিহারী ছাতনী গ্রামসহ আশপাশের ১০/১২টি গ্রামে ঢুকে ঘুমন্ত মানুষদের ধরে পিঠ মোড়া করে বেঁধে ছাতনী স্লুইচ গেটে এনে জড়ো করে।
পরদিন সকালে প্রথমে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গলাকেটে হত্যা করে। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে এসিড দিয়ে ঝলসানো হয়। পরে এসব শহীদদের লাশ ছাতনী স্লুইচ গেটসহ আশেপাশের পুকুর ও ডোবায় মাটি চাপা দেয়া হয়।
দিবসটি স্মরণে স্থানীয়ভাবে আলোচনা সভা দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার নুরুল ইসলাম, নাটোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, ছাতনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল সরকার, মুক্তিযোদ্ধা দুদু সরকার প্রমুখ। পরে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কমানা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯৭১ সালে নাটোরের ছাতনী গ্রামের গণহত্যার সেই নৃশংস ও হৃদয় বিদারক কথা আজো এ এলাকার মানুষের মনে নাড়া দেয়। ১৯৭১ সালের ৪ জুন এই দিনে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শহীদ হন প্রায় পাঁচ শতাধিক নিরীহ বাঙালি। শহীদদের রক্তে লাল হয়ে যায় আশেপাশের খাল, বিল ও পুকুর।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর উত্তরাঞ্চলের হেড কোয়ার্টার ছিল নাটোর। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী নাটোরের বিভিন্নস্থানে গণহত্যা চালিয়েছে। এর মধ্যে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল নৃশংস ও হৃদয়বিদারক।
নাটোর শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে ছাতনী গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা তৎকালীন এমসিএ শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর বাড়ি হওয়ায় এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের আক্রোশে পড়ে গ্রামটি।
একাত্তরের ৪ জুন গভীর রাতে হানাদার বাহিনীসহ কয়েকশ বিহারী ছাতনী গ্রামসহ আশপাশের শিবপুর, পন্ডিত গ্রাম, বারোঘড়িরা, ভাটপাড়া, আমহাটি, ভাবনি, হাড়িগাছা, রঘুনাথপুর ও বনবেলঘরিয়াসহ ১০/১২টি গ্রামে ঢুকে ঘুমন্ত নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, যাদের এতো বড় আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভাগ্যে জোটেনি আজও কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। শহীদ পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের আজও মেলেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি ছাতনী গণহত্যার দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হোক। সেই সঙ্গে দেশে শুরু হওয়া মানবতা বিরোধীদের সঙ্গে ছাতনী গণহত্যার ইন্ধন দাতাদেরও দ্রুত বিচার শুরু করা হোক।
এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে প্রতি বছর স্থানীয় লোকজন দিবসটি পালন করলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালন করার কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। সবার নাম সংগ্রহ করতে না পারায় মোট ৬৪ জনের নাম খোদাই করে রাখা হয়েছে। মহান স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ায় আক্ষেপ করেন স্থানীয়রা।
রেজাউল করিম রেজা/এমএএস/এমএস