অটোরিকশা বন্ধ : দ্বিগুণ ভাড়ায় বিপাকে যাত্রীরা
ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান সকাল ৮টায় বগুড়ার বনানী বাইপাস মহাসড়কের মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে হতবাক। আরে শেরপুর যাব কোনো যানবাহন নেই কেন? পরে যখন জানলেন মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলবে না তখন তিনি পড়লেন মহা বিপদে। বাস পাওয়া যাচ্ছে না। হাতে গোনা দুই একটা বাস আসলেও ভীড়ের কারণে ওঠার মতো পরিস্থিতি নেই।
এদিকে, আবার ২০ টাকার ভাড়া লাগানো হয়েছে ৪০ টাকা। ক্ষুব্ধ আতিকুর বললেন, ভাই কি দেশে যে বাস করি। এই নিয়ম হয়, আবার এই নিয়ম বাতিল করা হয়। আমরা পাবলিক আছি মহা ফ্যাসাদে। তবে সিএনজি চলাচলের জন্য একটা ভিন্ন উপায় বের না করে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগনকে বেকায়দায় ফেলানো হয়েছে।
একই রকমের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বগুড়ার মাটিডালি মোড়ে টিএমএসএস এর কর্মকর্তা রেজাউল করিম রয়েল বললেন, বাইপাস করে চলার উপায় নেই এমন রুটগুলোর জন্য একটা সমাধান বের করা দরকার। তানা হলে শুধু জনগণই হয়রানি ও কষ্টের শিকার হবে।
শনিবার মহাসড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা রোধের লক্ষ্যে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হবার ঘোষণার কারণে প্রায় সবগুলো মহাসড়কই ছিলো সিএনজিসহ সকল ধরনের থ্রি হুইলার মুক্ত। সড়কে অান্তঃরুটের বাস চললেও তাতে ভীড় ছিলো অনেক বেশি। ভাড়াও আদায় করা হয়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। আর মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণায় বগুড়ার ১২ হাজার অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এতে করে তাদের পরিবারের লক্ষাধিক সদস্য মানবেতর জীবনযাপন করবে বলে জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে কম দূরত্বের যাত্রী সাধারণকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গতকালও শহর এবং বেশ কিছু উপজেলায় মাইকিং করা হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি জানিয়েছে বগুড়া জেলা অটোটেম্পো অটোরিকশা, সিএনজি পরিবহন মালিক সমন্বয় কমিটি। তারা জানান, সরকারি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধ, অনশনসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বগুড়া বিআরটিএ সূত্র জানায়, বগুড়ার ৬৫ কিলোমিটার মহাসড়কে এবং ১০০ কিলোমিটার আন্তঃসড়কে ১২ হাজারের বেশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এছাড়া অটোরিকশার পাশাপাশি আরো ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভটভটিও চলছে মহাসড়কে। বগুড়া জেলা সীমানা দক্ষিণের চান্দাইকোনা থেকে উত্তরের রহবল পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার মহাসড়ক এবং বগুড়া থেকে জয়পুরহাট, বগুড়া থেকে নওগাঁ এবং বগুড়া থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত আন্তঃমহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতো।
বিআরটিএর সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান জানান, বগুড়ায় প্রায় ৪ হাজার অটোরিকশার নিবন্ধন রয়েছে। এর বাইরে আরো প্রায় আট হাজার অটোরিকশা বগুড়ায় চলাচল করছে। তারা ইতোমধ্যে অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ১৮টিকে জরিমানা এবং মহাসড়কে চলাচল করতে নিষেধ করেছে।
বগুড়া জেলা অটোটেম্পো, অটোরিকশা, সিএনজি পরিবহন মালিক সমন্বয় কমিটির সভাপতি আসাদুর রহমান দুলু মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে হরতাল-অবরোধ, অনশনসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সিএনজি চালক আব্দুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, ফকরুল, আজাদসহ আরো অনেকে জানান, শুধু মালিক শ্রমিকরা যে বেকার হবে তাই নয়, বগুড়ার অভ্যন্তরীণ এবং সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ এবং গাইবান্ধা জেলা পর্যায়ে সহজে ও কম খরচে চলাচল এবং যোগাযোগের যে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল তা ভেঙে পড়বে।
বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, চিকিৎসা, বিয়ে-শাদী বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে মানুষ কম খরচে ব্যবহার করতো সিএনজি-অটোরিকশা। এখন এ সহজলভ্য যানবাহন মহাসড়কে বন্ধ হওয়ায় আবারো সবাই জিম্মি হয়ে পড়বে রেন্ট-এ কার মাইক্রো ব্যবসায়ীদের কাছে।
লিমন বাসার/এসএস/আরআইপি