শেষ বয়সে ‘পাপ’ করব না
অভাবের তাড়নায় টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন আদালত রোডে সপ্তাহে দু’দিন সুলভমূল্যে ডিম বিক্রি করে স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম। বাজার দরের চেয়ে কিছুটা কম দামে ডিম বিক্রি করেন তিনি। ডিম বিক্রি করে যে কয় টাকা আয় হয় তা দিয়েই স্ত্রীকে নিয়ে দিব্যি চলে যায় তার সংসার। দাম কমের জন্য পুরাতন আদালত রোডে আব্দুস ছালাম একজন সুপরিচিত ডিম বিক্রেতা।
জানা যায়, ডিম বিক্রেতা আব্দুস ছালাম টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ৭নং আলোকদিয়া ইউনিয়নের সিংরামবাড়ি গ্রামের মরহুম রুস্তম আলীর ছেলে। এক সময় জমিজমা ভালোই ছিল। তিন ছেলের পড়ালেখা করাতে গিয়ে প্রায় সব জমিই বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। ছেলেরাও বড় হয়ে সংসারী হয়েছেন। একজন বিদেশে চাকরি করছেন। কিন্তু তারা বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখভালের প্রয়োজন বোধ করেন না। দেখা-শোনা তো পরের কথা, সন্তানরা বাবা-মার খোঁজ-খবর পর্যন্ত রাখে না। জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ডিম বিক্রির কাজে নেমেছেন। সপ্তাহে দু’দিন ডিম বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভালোই চলে।
আব্দুস ছালাম সপ্তাহে পাঁচদিন নিজ এলাকা মধুপুরে ঘুরে ঘুরে পাইকারি দরে হাঁস-মুরগির ডিম কিনেন আর সেই ডিম সপ্তাহে দুই দিন টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন আদালত রোডে বিক্রি করেন। বাজার দরের চেয়ে প্রতি হালিতে ১-২ টাকা কম দামে বিক্রি করায় তার ডিমের চাহিদাও ব্যাপক। বলতে গেলে স্থানীয় ক্রেতারা বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম কবে ডিম নিয়ে আসবেন সে অপেক্ষায় থাকেন।
৮০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম আক্ষেপ করে জানান, ছেলেরা বিয়ে করে সংসারী হওয়ায় তাদের নিজেদেরই অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বাবা-মার বোঝা কী করে বইবে! জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের বারবার ধর্ণা দিয়েও একটি বয়স্কভাতার কার্ড পাননি। কার্ড পেতে ‘ঘুষ’ লাগে, কিন্তু বৃদ্ধ মানুষ এই শেষ বয়সে ঘুষ দিয়ে ‘পাপ’করতে চান না। তাই সামান্য পুঁজি নিয়েই ডিমের ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রথমে তিনি মধুপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ির গৃহিনীদের কাছ থেকে ডিম কিনে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে বিক্রি করতেন। তাতে তেমন লাভ হতো না। এর মধ্যে জনৈক ব্যক্তির মুখে শুনতে পান মধুপুরের চেয়ে টাঙ্গাইল শহরে ডিমের দাম হালিতে ৩-৪ টাকা বেশি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন মধুপুর থেকে ডিম কিনে টাঙ্গাইল শহরে বিক্রি করবেন। সেই থেকে শুরু, চলছে এখনও!
তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল শহরে হাঁস-মুরগির (দেশি) ডিমের বাজার মূল্যের চেয়ে তিনি হালিতে ১-২ টাকা দাম কম নেন। এটা ব্যবসা বাড়ানোর জন্য নয়, দেশপ্রেম থেকে। তিনি মনে করেন, এক হালি (চারটি) ডিমে ১-২টাকা মুনাফা করা যুক্তিযুক্ত বেশি হলে পাপ হবে।
তপ্ত রোদ, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা যত প্রতিকূল আবহাওয়াও আব্দুস ছালামকে দমাতে পারে না। সপ্তায় দুইদিন আদালত রোডে তিনি ডিমের দোকান খুলবেনই।
আরিফ উর রহমান টগর/আরএ/জেআইএম