নোংরা পরিবেশে খাদ্য তৈরি, প্রকাশ্যে বিক্রি
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের দোকানগুলোতে প্রকাশ্যেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে বেকারি, মিষ্টির দোকান ও হোটেলগুলোতে নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. তোফাজ্জেল হোসেনের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। অভিযোগ রয়েছে, তাকে ম্যানেজ করেই দোকানগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করছে দোকান মালিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদরপুর সদর বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারগুলোতে অবাধে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, নিমকি, সিঙ্গারা, রুটি, পাউরুটি, মিষ্টি, আম, লিচু ইত্যাদিসহ বাহারি ইফতার খাবার সামগ্রী। এসব খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই-বাছাই করার দায়িত্বে রয়েছেন সদরপুর স্বাস্থ্য বিভাগের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. তোফাজ্জেল হোসেন। এসব খাদ্যদ্রব্য বাজারে খোলামেলাভাবে বিক্রয় করলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চৌদ্দরশি, আটরশি, সাড়ে সাতরশি, সাতরশি, বাইশরশি, নয়রশি, ঢেউখালী, পিয়াজখালী এলাকায় নামে-বেনামে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি খাদ্যসামগ্রী তৈরির কারখানা রয়েছে। এদের অধিকাংশ কারখানায় নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাদ্যপণ্য।
সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সরবরাহকৃত খাদ্য সামগ্রী যেসব বেকারিতে তৈরি হচ্ছে তার বেশির ভাগের নেই কোনো বৈধ লাইসেন্স ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন। স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ ময়দার পরিবর্তে নিম্নমানের আটা এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল অ্যামোনিয়া ব্যবহার করে বেকারিগুলোতে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী।
স্থানীয় আশরাফ নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি হলেও স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তাকে ম্যানেজ করেই চলছে এ কাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেকারি ব্যবসায়ী বলেন, আটা-ময়দা মাখতে গেলে পানির ব্যবহার হয়। পানির ব্যবহার হলে কিছুটা নোংরা তো হবেই। এভাবেই চলছে সবখানে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যসামগ্রী তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কই পাবো ভাই? এই স্থানে চালিয়ে নিতে হয় ব্যবসা। স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে ম্যানেজ করেই এসব চলে।
এছাড়া মিষ্টি তৈরির কারখানাগুলোতেও অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। অনেক কারখানায় পুরাতন মিষ্টির রস সামগ্রী দিয়ে আবার তৈরি করা হচ্ছে মিষ্টি। যেখানে মিষ্টি তৈরি করা হচ্ছে তার পাশে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে বসেই মিষ্টি তৈরি করা হচ্ছে। খাবার হোটেলগুলোরও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌসুমকালীন ফল আম, লিচু এনে ওসব ফলে কার্বাইট, ফরমালিন ও বিষাক্ত কেমিক্যাল ইলিথিয়ন ব্যবহার শেষে বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।
পিয়াজখালী বাজারের চায়ের দোকানদার আসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ফুটপাতে চা-পান বিক্রি করে সংসার চালাই। উৎপাদন বা মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ দেখার সময় নাই। বিক্রি করলে লাভ হবে। তাই বিক্রি করি। এগুলো আমাদের দেখার বিষয় না।
এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে ট্রেনিংয়ে থাকার কারণে বাজার পরিদর্শনে যাওয়া হয়নি। এছাড়া শারীরিকভাবে আমি সুস্থ নই। তবে দ্রুতই বাজার পরিদর্শন করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফরিদপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.আফজাল হোসেন বলেন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. তোফাজ্জেল হোসেনের অনিয়মের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএম/পিআর