মুক্তামণির চাওয়া পূরণ করেছে পরিবার
সাতক্ষীরায় বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুক্তামণির (১২) চাওয়া অনুযায়ী তাকে তার দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
মুক্তামণির চাচা ওসমান গনি জাগো নিউজকে জানান, মুক্তামণি তার দাদার খুব আদরের ছিল। সেও দাদাকে খুব ভালোবাসতো। মুক্তামণি যখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন তখন তার দাদা মারা যান। চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর মুক্তামণি মাঝে মাঝে দাদার কবর দেখতে চাইতো। তখন পরিবারের সদস্যরা হুইল চেয়ারে করে দাদার কবর দেখিয়ে আনতো। কয়েকদিন আগে থেকে মুক্তামণির অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সে বলতো- ‘আমি যদি মারা যাই, আমাকে যেন দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়।’
এর আগে বুধবার সকাল ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় মুক্তামণির। বাদ জোহর বাড়ির পাশেই তার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতশত মানুষ অংশ নেন।
এদিকে মুক্তামণির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য লোকজন ভিড় করতে থাকে। খবর পেয়ে তার বাড়িতে ছুটে আসেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন সাতক্ষীরার প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম গাজী জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জ্বর এসেছিল মুক্তামণির। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলি। তখন তিনি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তার পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার হাফিজুল্লাহ ও ফরহাদ আলম এসে জ্বরের চিকিৎসা করেন। তাৎক্ষণিক আমি ওষুধপত্র নিয়ে আসি। দুপুরে ও রাতে সেই ওষুধ খাওয়াই। রাতে একটা ছবেদা ফল খেয়েছিল মুক্তামণি। বুধবার সকালে কিছু খায়নি। আমার হাতের ওপর মারা যায় মেয়েটি।
গত ২০১৭ সালের ৯ জুলাই ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে নিয়ে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে তাকে ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তামণির হাত দেখে আঁতকে ওঠেন। একইসঙ্গে হাত অপারেশনের জন্য অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা দেশেই অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েক দফা অপারেশনও করেন। তবে হাতের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি।
২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয় মুক্তামণিকে। দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসা সেবার পর এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসে মুক্তামণি। তবে পরবর্তীতে মুক্তামণি আর ঢাকায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে মুক্তামণির অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে তার পরিবারও।
গত ১৯ মে মুক্তামনি জাগো নিউজকে বলেছিল, আমি আর সুস্থ হব না। ডাক্তার স্যাররা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমাকে সুস্থ করতে পারেননি। জানি না কতদিন এভাবে বেঁচে থাকব আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর/জেআইএম