চোখের জলে মুক্তামণিকে শেষ বিদায়
সাতক্ষীরায় বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুক্তামণির (১২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম গাজী, মা আসমা বেগম, বোন হীরামণি, দাদি সালেহা বেগমসহ গোটা পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।
এর আগে সকাল ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় মুক্তামণির। বাদ জোহর বাড়ির পাশেই তার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতশত মানুষ অংশ নেন।
জানাজায় অংশ নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর মুক্তামণিকে সুস্থ করতে কোনো গাফিলতি ছিল না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। টানা ৬ মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা করেও সুস্থ হয়নি মুক্তামণি। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়ারও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা অপারেশনের জন্য অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে মুক্তামণির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য লোকজন ভিড় করতে থাকে। মুক্তামণির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িতে ছুটে আসেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন সাতক্ষীরার প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম গাজী জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জ্বর এসেছিল মুক্তামণির। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলি। তখন তিনি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তার পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার হাফিজুল্লাহ ও ফরহাদ আলম এসে জ্বরের চিকিৎসা করেন। তাৎক্ষণিক আমি ওষুধপত্র নিয়ে আসি। দুপুরে ও রাতে সেই ওষুধ খাওয়াই। রাতে একটা ছবেদা ফল খেয়েছিল মুক্তামণি। বুধবার সকালে কিছু খায়নি। আমার হাতের ওপর মারা যায় মেয়েটি।
গত ২০১৭ সালের ৯ জুলাই ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে নিয়ে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে তাকে ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তামণির হাত দেখে আঁতকে ওঠেন। একইসঙ্গে হাত অপারেশনের জন্য অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা দেশেই অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েক দফা অপারেশনও করেন। তবে হাতের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি।
২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয় মুক্তামণিকে। দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসা সেবার পর এক মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসে মুক্তামণি। তবে পরবর্তীতে মুক্তামণি আর ঢাকায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে মুক্তামণির অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে তার পরিবারও।
গত ১৯ মে মুক্তামনি জাগো নিউজকে বলেছিল, আমি আর সুস্থ হব না। ডাক্তার স্যাররা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমাকে সুস্থ করতে পারেননি। জানি না কতদিন এভাবে বেঁচে থাকব আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর/পিআর