ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভোগান্তি কমছে না
ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনের কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের অন্তত ৬০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এখনও যানজট রয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি গোমতী সেতু, মুন্সীগঞ্জের মেঘনা ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতুতেই আটকে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেনের গতি। এতে গত রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া যানজট তৃতীয় দিনের মতো বুধবারও রাত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
আটকে পড়েছে শত শত যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। দুটি সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব এবং গোমতী সেতুতে ওজন নিয়ন্ত্রণের নামে যানবাহন পরিমাপে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ চালকদের হয়রানির কারণে ঢাকাগামী অংশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই কুমিল্লা থেকে ঢাকার ২ ঘণ্টার যাতায়াতে সময় যাচ্ছে ৯-১০ ঘণ্টা। তবে হাইওয়ে ও থানা পুলিশের দাবি ঢাকা নগরীতে দিনের বেলায় পণ্যবাহী যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করায় রাতের বেলায় পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই রাতে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জানা গেছে, অতিমাত্রায় যানবাহনের চাপে গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতু কেন্দ্রীক যানজট ক্রমেই বাড়ছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৯-১০ ঘণ্টা। হাইওয়ে ও থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা চেষ্টা করেও যানজটের দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
গত তিন দিন ধরে মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার মাধাইয়া পর্যন্ত প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকাজুড়ে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনের চালকরা জানান, মেঘনা ও গোমতী সেতুর উভয় প্রান্তে ফোর লেনে চলাচলকারী পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো সেতু এলাকায় গিয়ে ২ লেনে চলাচল কিংবা কখনও কখনও নিয়ন্ত্রণ করায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসা তিশা পরিবহনের যাত্রী বীমাকর্মী তফাজ্জল হোসেন জানান, সকাল ১০টায় রওয়ানা দিয়ে কুমিল্লা শহরে পৌঁছেছি বিকেল সোয়া ৫টায়।
ঢাকা থেকে টাইলস নিয়ে কুমিল্লায় আসা ট্রাকচালক ইব্রাহিম খলিল জানান, মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে রাত পৌনে ১টায় মেঘনা সেতু ওপারে যানজটে পড়ি। পরে ধীরে ধীরে কুমিল্লার পথে যানজট অতিক্রম করে বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে শহরে পৌঁছি। এমন যানজট আর কখনও দেখিনি।
রাত ৮টার দিকে দাউদকান্দির সাংবাদিক আলমগীর হোসেন জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সড়কে পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এখন যানজট দাউদকান্দির টোল প্লাজা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। রাতের মধ্যে যানজট আরও বাড়তে পারে।
হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানা পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে পণ্যবাহী অতিরিক্ত যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মহাসড়কের যানজট নিরসনের লক্ষে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। সহসাই মহাসড়ক যানজট স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বিপিএম বলেন, কুমিল্লা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে কাঁচপুর, মেঘনা ও দাউদকান্দিসহ ৩টি সেতুতে গাড়ি ধীরগতিতে চলে। সামনের দিকে যদি গাড়ি না যায় তাহলে তো যানজট নিরসন সম্ভব নয়। ঢাকায় গাড়ি প্রবেশে ধীরগতির কারণে এবং রমজানকে সামনে রেখে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
যানজট নিরসনে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, ঢাকার দিকে যানবাহনের গতি অনেক কম। এছাড়া দিনের বেলায় পণ্যবাহী গাড়িগুলো ঢাকায় প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই মহাসড়কের ফোর লেনে চলাচলকারী সব যানবাহন ওই তিনটি ব্রিজের কাছে গিয়ে থেমে যায়। এতে দিবা-রাত্রি যানজট কমছে না।
কামাল উদ্দিন/এমএএস/জেআইএম