৫ লাখ মানুষের সেবায় ৩ চিকিৎসক
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এই প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও যন্ত্রপাতির সংকটে এ উপজেলায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ৫টি কনসালটেন্ট ও ১৭টি মেডিকেল কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকের মোট ২১টি পদ রয়েছে। কিন্তু এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে একজন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বপালনের পাশাপাশি রোগী দেখাশোনা করেন। মূলত দুইজন মেডিকেল কর্মকর্তা দিয়েই এ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলছে।
এছাড়াও হাসপাতালটিতে স্থায়ী রাজস্ব দ্বিতীয় শ্রেণির ৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র একজন, তৃতীয় শ্রেণির ৮৬টি পদের মধ্যে ৫৩ জন, চতুর্থ শ্রেণির ২৪টি পদের মধ্যে মাত্র ৬ জন কর্মরত রয়েছে। ৫ জন সুইপারের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন।
এদিকে একজন টেকনিশিয়ান কর্মরত থাকলেও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে বন্ধ রয়েছে এক্স-রে মেশিনটি। দীর্ঘ একযুগ বন্ধ রয়েছে জেনারেটরের ইঞ্জিনটি। এছাড়াও আসবাবপত্র ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির তীব্র সংকটে এ উপজেলায় চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সটি কাগজে কলমে ৫০ শয্যার হলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে কার্যক্রম। প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী সিটে ভর্তি থাকে। প্রতিদিন বর্হিবিভাগে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ৩৫০-৪০০ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হয় কর্মকর্তা ও সেবা গ্রহীতাদের। অনেক সময় প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয় রোগীদের। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তরা জেলা সদর ও বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে সেবা নিতে পারলেও সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সোনাগাজীর লাখ লাখ মানুষ।
কর্মরত মেডিকেল কর্মকর্তা মো. ইফতেখারুল আলম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকলেও আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সুইপার ও ওয়ার্ড বয়ের তীব্র সংকট থাকায় অনেক সময় চিকিৎসকরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে বাহিরের লোক দিয়ে এসব কাজ সারেন।
এ বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, হাসপাতালটিতে চিকিৎসার মান বাড়াতে একাধিক বার চিঠি দিয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড় এম কামরুল আনাম জাগোনিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। বার বার জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এমতাবস্থায় উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান অনেকটা ভেঙে পড়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, দীর্ঘ দিন থেকে ফেনীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। নতুনভাবে নিয়োগ অথবা পদায়ন করে এ জেলায় জনবল বাড়াতে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরএ/পিআর