বজ্রপাত আতঙ্কে রাজশাহীতে ধান কাটায় ধীরগতি
বরেন্দ্র অঞ্চলে চলছে বোরো ধান কাটার ধুম। তবে বৈরী আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। টানা বর্ষণে খেত ডুবে যাওয়ায় বেড়েছে ক্ষতির পরিমাণ। শ্রমিক সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে বজ্রপাত আতঙ্ক। এতে খেতের পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
গত ৯ মে জেলার তানোর উপজেলার কামারগাঁ বাতাসপুরে বজ্রপাতে মারা যান ওই গ্রামের কৃষক আনসার আলী (৩০)। এ ঘটনায় আহত হন আরও তিন কৃষক। ওই দিনই বজ্রপাতে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল নামোপাড়ার সোহাগ আলী (১৮) এবং কলমা ইউনিয়নের চকরতিরাম এলাকার কৃষাণি এলেনা মুরমু (৩৫)।
এদের মধ্যে আনসার আলী ও এলেনা মুরমু অন্যান্য কৃষি শ্রমিকদের সাথে বোরো ধান কাটছিলেন। আর সোহাগ আলী মাঠে সেমি ডিপটিউবয়েলে সেচ দিচ্ছিলেন। বজ্রাপাতে এ তিন জনের মৃত্যুতে আতঙ্কে এখানকার কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা।
উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কৃষক হাসিবুর রানা বলেন, শ্রমিক সংকট রয়েছে, তার উপর বজ্রপাত আতঙ্ক। এতে মাঠের অর্ধেক জমির ধানও কাটতে পারেননি কৃষক। এখন প্রায়ই ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে উপজেলায় ধান কাটায় ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। মাত্র ৬৫ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া থাকলেও দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা।
তানোর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, বর্তমানে তানোর জুড়েই বিরাজ করছে বজ্রপাত আতঙ্ক । এতে চড়া পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যারা কাজ করছেন তারাও থাকছেন আতঙ্কে। অচিরেই মাঠে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
এদিকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের হিসেবে, গত তিন বছরে কেবল রাজশাহীতেই বজ্রাপাতে মারা গেছেন ৪০ জন। এর মধ্যে চলতি অর্থ বছরের এক মাসেই মারা গেছেন ১৩ জন। এর আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১৩ জন এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ১৪ জন মারা যান বজ্রাপাতে। এ দুই অর্থবছরে আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন।
বজ্রপাত অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক। তিনি বলেন, এটি মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি নেই। তবে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে নগর অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আহতদের দেয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা। এছাড়া হতাহত দুস্থ পরিবারগুলোকে ৩০ কেজি করে চালও দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে বজ্রপাতের প্রবণতা বেড়েছে। গত অর্থবছরে জেলায় বজ্রপাত নিরোধক এক লাখ ১৮ হাজার ৯শ তালবীজ রোপণ করা হয়েছে। ক্ষতি কমিয়ে আনতে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
আমিনুল হক বলেন, জেলায় বজ্রপাতে যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই মাঠে কাজ করেন। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে না থেকে যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে। বিশেষ করে মাঠের গভীর নলকূপের পাকাঘরে আশ্রয় নেয়া যেতে পারে।
এদিতে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান কলেন, দেশের যেসব জায়গা বজ্রপাত প্রবণ তার মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চল। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো এলাকার পর্যবেক্ষণে এটি বলা খুবই কঠিন। এছাড়া এ অঞ্চলে বজ্রপাত প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ নিয়ে কোনো গবেষণাও নেই।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আরও তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে চার লাখ ১১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চালের হিসেবে তা দুই লাখ ৭৪ হাজার ৫১ মেট্রিক টন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/আরআইপি