গায়ের চামড়া খসে পড়ছে জাহাঙ্গীরের
সারা গায়ের চামড়া-মাংস শক্ত হয়ে খসে খসে পড়ছে জাহাঙ্গীরের। অর্থাভাবে চিকিৎসা নেই। বিরল এই রোগের কারণে স্ত্রীও তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে। এখন অসহায় অবস্থায় বৃদ্ধা মায়ের আঁচলের তলে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন তিনি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা করা হলে হয়তো সুস্থ হতে পারে জাহাঙ্গীর। কিন্তু সেই চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তাই বেঁচে থাকার দুয়ার যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার।
যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ায় রেললাইনের পাশেই টিনের একটি ঘরের মধ্যেই দিন কাটে জাহাঙ্গীরের (৩৬)। ওই এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর ছিলেন যশোর-বেনাপোল রুটের বাসের চালক।
তিনি জানান, প্রায় ১২ বছর আগে তার বাম হাতে কালো একটি স্পট দেখা দেয়। এরপর আস্তে আস্তে সেটি বড় ও শক্ত হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে এই অবস্থা হাতে ও পিঠে থাকলেও গত ৩/৪ বছর হলো তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সারা শরীরের চামড়া ও মাংস শক্ত হয়ে পচন ধরেছে। গোটা শরীরেই তার দগদগে ঘা। এই অবস্থায় গত এক বছর ধরে ওই ছোট্ট ঘরই তার দুনিয়া। কষ্ট ও যন্ত্রণা নিয়ে ওই ঘরেই জীবন কাটে তার।
কিন্তু দিন এমন ছিল না জাহাঙ্গীরের। তিনি জানান, যশোর-বেনাপোল রুটের বাস চালিয়ে তাদের জীবন ও সংসার ভালোই কেটে যেতো। এরই মধ্যে ৮ বছর আগে একই এলাকার শিউলি খাতুনকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর তাদের ছেলেও হয়। তার নাম রাখেন পরশ। কিন্তু এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরের দেহে বিরল এই রোগ আরও বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। রোগের কারণে বছর চারেক আগে স্ত্রী শিউলিও তাকে ত্যাগ করে ছেলে নিয়ে চলে গেছে। নতুন করে সে (স্ত্রী) বিয়েও করেছে। এখন মা জয়গুন নেছাই তার শেষ আশ্রয়।
জয়গুন নেছা জানান, সারা গায়ে এই রোগের কারণে জাহাঙ্গীর নড়াচড়াও করতে পারে না। সারাদিন এভাবেই বসে থাকে। খাটের উপরেই তার বাথরুম করতে হয়।
কান্না কণ্ঠে তিনি বলেন, আগে ছেলের আয়ে সংসার চলতো। এখন সে বিছানায়। আরেক মেয়ে বাসা-বাড়িতে কাজ করে যে আয় করে তার সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাদের কোনো মতে দিন চলে। তাই চিকিৎসা আর করা হয়ে ওঠে না জাহাঙ্গীরের।
ওই এলাকার সমাজকর্মী তোফাজ্জেল হোসেন মানিক জানান, ডা. সৈয়দ আল-আমিন, ডা. লতিফ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ’র কাছে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা বলেছেন, এই রোগের চিকিৎসা যশোরে হবে না। তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। সেটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এরপর আর অর্থাভাবে চিকিৎসা হয়নি তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহাঙ্গীর বলেন, ভালো মানুষগুলো যদি সাহায্য সহযোগিতা করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো তাহলে হয়তো আমাকে এভাবে যন্ত্রণায় দিন কাটাতে হতো না। এজন্য তিনি সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে এই ০১৭৬২-৬১২৮৯১ নম্বরে।
মিলন রহমান/এমএএস/পিআর