ক্লাস নিলেন জেলা প্রশাসক
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেছেন, আমরা বদলে দেবো, বদলে যাবো। এ দেশটা আমাদের, সমাজটা আমাদেরই গড়তে হবে। সততা ও নিষ্ঠা আমাদের সফলতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমরা পরিবার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নেই। এরপর বিদ্যালয় থেকে একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণ করি। নৈতিক শিক্ষাপ্রাপ্তরাই প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
বুধবার সকালে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক শহরের গোয়ালচামট এলাকায় অবস্থিত সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীদের ‘নৈতিক শিক্ষা ও দেশপ্রেম’বিষয়ক এক ঘণ্টার বিশেষ ক্লাস নেয়ার সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশ্যে কথাগুলো বলেন। জেলা প্রশাসক ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিরও সভাপতি।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা যেমন আমাদের জন্মদাতা মাকে ভক্তি, শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি, তার প্রতি দায়িত্ব পালন করি। একইভাবে মাতৃভূমিকে মা হিসেবে দেখতে হবে। আর মানুষকে ভালোবাসতে পারলে সোনার মানুষ হওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বড় লোক নয়, বড় মানুষ হও।
তিনি আরও বলেন, আগামী প্রজন্মকে প্রকৃত শিক্ষা দান, দেশ ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মানসম্মত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানসম্মত শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসককে নিজেদের মাঝে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে আনন্দিত ও উৎসাহিত বোধ করে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদা ইয়াসমিন ঝুমুর জানায়, ডিসি স্যারের ক্লাস আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। আমরা দারুণভাবে উৎসাহিত হয়েছি। তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও পরামর্শে নিজেদেরকে দেশের সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে অনন্য ভূমিকা পালন করবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। নারী শিক্ষার উন্নয়নে জেলা প্রশাসকের এ ধরনের পদক্ষেপ খুবই প্রশংসনীয়।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, এ বিদ্যালয়ে কিছু সময় পড়াতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। পুরো সমাজকে বদলে দিতে পারেন শিক্ষকরা। আদর্শ পাঠদান ও মূল্যবোধ শাণিত করে আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। তারই সামান্য প্রচেষ্টা করেছি মাত্র বলে তিনি জানান।
পরে দুপুরে জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম, কমিটির সদস্য মো.ওহিদুর রহমান, মোস্তাফিজুল হক, হারুন-অর-রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রশাসনকে জনবান্ধব করার লক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন উম্মে সালমা তানজিয়া। জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, ইউডিসি, ইউনিয়ন পরিষদের সেবাসমূহ অটোমেশন, অফিস আধুনিকায়ন, ডিজিটাল ভূমি অফিস, হেল্প ডেস্ক, জয়িতা অঙ্গন, ডিজিটাল হাজিরা, শিক্ষক বাতায়নসহ নানা ধরনের জনসেবামূলক কর্মসূচি চালু ও সেবার মান উন্নয়নসহ প্রশাসনকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেন তিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের সমন্বয়ে নানামুখী কর্মসূচিও গ্রহণ করেন উম্মে সালমা তানজিয়া। তিনি জেলার ৩০০টিরও বেশি স্কুল-কলেজে এ পর্যন্ত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করেছেন।
গত ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরে যোগদানের এক বছরের কিছু বেশি সময় পর তিনি নাগরিক সেবায় ‘দেশ সেরা’ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হন।
এমএএস/এমএস