ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শহরবাসী খুশি, কৃষকের মুখেও হাসি

জেলা প্রতিনিধি | মৌলভীবাজার | প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ০৯ মে ২০১৮

সামান্য বৃষ্টিতে হাটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে যেত শহরের ফাটাবিল,গির্জাপাড়াসহ বেশ কিছু অংশ। বছর বছর প্লাবিত হত শহরের বাইরের থাকা ৪ ইউনিয়নের হাজারও কৃষকের ধান। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক এবং পৌর মেয়রের আন্তরিকতায় এ দৃশ্য এখন বদলে গেছে। শহরবাসীর খুশি, কৃষকের মুখেও প্রাণখোলা হাসি ফুটেছে।

মৌলভীবাজার শহরের পানি নিষ্কাশনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম এ কোদালি ছড়া। ১৭ কি.মি. লম্বা কোদালিছড়া বর্ষিজুরা পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু হয়ে মৌলভীবাজার পৌর শহরের ভেতর প্রবাহিত হয়ে মিশেগেছে হাইল হাওরে। ১৭ কি.মি. লম্বা এ ছড়ার ৩ দশমিক ৭ কি.মি. প্রবাহিত হয়েছে মৌলভীবাজার পৌর শহরের ভেতর দিয়ে। বাকি অংশটুকু শহরের বাইরে ৪ ইউনিয়নের হাজারও কৃষকের জীবিকার উৎস। অথচ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা, দখলসহ বিভিন্নভাবে ছড়াটি ভরাট হয়ে গত কয়েকটি বছর এসব এলাকার মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সামন্য বৃষ্টিতে শহরের বর্ষিজুরা, ফাটাবিল, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় হাটুপানি থেকে কোমর পানি পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। কিন্তু বর্তমানে সে চিত্র বদলে গেছে।

jagonews24

মৌলভীবাজার পৌরবাসীর দুঃখের কোদালিছড়া খাল এখন হাল ফিরে নতুন প্রাণ পেয়েছে। পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমানের উদ্যোগে বদলে গেছে খালের চিত্র। দুই বছর আগে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কোদালিছড়া খাল খননের জন্য পৌরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন তিনি। জনমত সৃষ্টির জন্য কয়েক তরুণ-তরুণীকে নিয়ে ফেসবুকে ‘গড়ব স্বপ্নের শহর’নামে একটি পেইজ খোলেন স্থানীয় সমাজকর্মী হাসানাত কামাল এবং ডোরা পেন্টিস। অনলাইনে অফলাইনে কোদালিছড়া নিয়ে ব্যাপকভাবে সচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারণা চলে। এর সঙ্গে যুক্ত হন জেলা প্রশাসনসহ শতাধিক সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন সরকারি বিভাগ।

গত ফেব্রুয়ারি ১০ তারিখে সকল বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, শহরের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, সামাজিক ও ৫০টির অধিক স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের পৌর নাগরিকদের অংশ গ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমে কোদালিছড়া খনন শুরু হয়। মেয়র তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুইটি এক্সেভেটর খনন কাজে নিয়োজিত করেন। গত দেড় মাস ধরে চলে খনন কাজ। এতে পৌরসভার অংশে কোদালিছড়ার ৯৮ ভাগ অংশের দখল উদ্ধার ও ৫ থেকে ৬ ফুট গভীর করে খনন সম্পন্ন হয়। কোদালিছড়ার উপর গড়ে উঠা বিভিন্ন বাসা বাড়ি এবং ছড়া খননের প্রয়োজনে অন্তত অর্ধশত পৌরসভার নাগরিক নিজেরা তাদের পাকা দেওয়াল ভেঙে দিয়ে এক্সেভেটর চলাচলের পথ করে দিয়েছেন। এ খননের ফলে বর্ষায় মৌলভীবাজার শহরের জলাবদ্ধতা দূর হয়। দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছেন ৪ ইউনিয়নের হাজারও কৃষক।

jagonews24

কোদালিছড়া ভরাট হবার কারণে কৃষকদের প্রতিটি বোরো মৌসুমে ফসল তলিয়ে যেত । কিন্তু এ বছর জমি থেকে কোদালিছড়ার গহীন হওয়ায় তা হচ্ছে না। শহরের বাইরের অংশ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় খনন করে। আর শহরের বাইরের অংশে ৪০ ফুট প্রস্থ এবং ১০ ফুট গভীর খনন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা।

মোস্তপাপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, অন্যান্য বছর সামান্য বৃষ্টিতে ধান ডুবে যেত, ধান কেটে পলিথিনের বস্তায় মুড়িয়ে দড়ি দিয়ে টেনে আনতাম কিন্তু এ বছর বৃষ্টি হলেও পানি জমছে না।

পৌর মেয়র ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কোদালিছড়াকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সবার। সবাই মিলে যদি একটু সচেতন থাকি তবেই তার সুফল ভোগ করা যাবে। চাইলেই বছর বছর খনন করা যাবে না। সবাই সচেতন থাকলে কোদালিছড়া ভরাট হবে না।

রিপন দে/ আরএ/আরআইপি

আরও পড়ুন