রাজাকারও পাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা!
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নির্দেশের পরও গত ২ বছরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠি ও শাহজিরা গ্রামের ৫ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট থেকে নাম প্রত্যাহার করা হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে তারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। তাদের মধ্যে একজন রাজাকার রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর সেকেন্ড ইন কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) এম.এ হক (বীর বিক্রম) একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব খান, শাহজিরা গ্রামের বাসিন্দা ও শরিকল ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আ. রহিম সরদার অভিযোগ করেন, সাকোকাঠি গ্রামের মোতালেব শিকদার, তাজেম আলী চৌকিদার, খালেক মোল্লা ও সাহজিরা গ্রামের আ. রহমান খান, মোবারেক হোসেন হাওলাদার মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করছেন। এরা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। পাশাপাশি তাজেম আলী চৌকিদার ছিলেন একজন রাজাকার।
স্থানীয়রা জানায়, ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাকোকাঠি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব খান ওই ৫ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাতিলের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৬ সালের ৭ মার্চ বরিশালের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
মন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করে তৎকালীন গৌরনদীর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমানকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। তবে ইউএনও নিজে তদন্ত না করে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদকে। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন দেননি।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) এম.এ হক (বীর বিক্রম) বলেন, আমি ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন ৯ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টরের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছি। এলাকার ওই ৫ ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ভাতা উত্তোলন করছেন। এদের একজন রাজাকার। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এটা মেনে নেয়া কষ্টের। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জেনেও তাদের ভাতা বন্ধ করছে না। এটা অন্যায়।
তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জানান, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলক এ অভিযোগ করছে।
গৌরনদী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি জটিল হওয়ায় আমি তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত মতামত দিই। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা নাছরিন বলেন, কিছুদিন আগে আমি এ বিষয়টি জানতে পারি। তবে বিষয়টি অনেক আগের, এরপরও তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাইফ আমীন/এএম/জেআইএম