তুলা চাষে স্বাবলম্বী কৃষক
লাভজনক ও ফলন ভালো হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে ঝালকাঠির গাবখান ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে বেকার ও দরিদ্র মানুষের। এ অঞ্চলের কৃষিতে তুলা চাষকে নতুন সম্ভাবনা বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় সাত বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষকরা রুপালি-১ ও রুপালি-৪ জাতের তুলা চাষ করছে।
চলতি মৌসুমে ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃষিভিত্তিক গ্রাম গাবখান ও এর আশপাশের এলাকায় ৭০ একর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। চৈত্রের শুরু থেকে ক্ষেতগুলোতে সাদা তুলায় ভরে গেছে। ক্ষেতে তুলাতে ব্যস্ত কৃষক।
তুলা চাষিরা জানান, উঁচু জমিতে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে তুলার বীজ বপন করা হয়। কার্তিক মাস থেকে গাছে ফুল ধরে। অগ্রহায়ণ-পৌষে গোলাকার ফল ধরে। আর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পরিপক্ব ফলগুলো ফেটে সাদা তুলা বেরিয়ে আসে। এ বছর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ হবে না। ২০১১ সালে প্রথমবার গাবখান গ্রামে রুপালি-১ জাতের তুলা চাষ শুরু হয়। ফলন ভালো হওয়ায় পরের বছর থেকে জেলার রাজাপুর ও নলছিটিতে রুপালি-৪ জাতের তুলা চাষ শুরু হয়।
গাবখান গ্রামের তুলা চাষি মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ২০১১ সালে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তার পরামর্শে আমরা গ্রামের চারজন মিলে প্রথমবার চার বিঘা জমিতে তুলা চাষ শুরু করি। ফলন ভালো হওয়ায় আমরা ধীরে ধীরে ক্ষেতের আয়তন বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে আমরা ১৭ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর তুলার দাম কিছুটা বেড়েছে। গতবার প্রতি মণ তুলা ২২০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ২৪০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। মান ভালো হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার কটন মিল মালিকরা আমাদের তুলা নেন। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ হবে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটু সহায়তা পেলে তুলা চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
চাষি মো. মোবারক আলী বলেন, আমাদের গাবখান তুলাক্ষেতের জমিতে বালুর আধিক্য থাকায় প্রচুর পানি দিতে হয়। এখানে কোনো নলকূপ নেই। নদী থেকে পাম্পের মাধ্যমে মাসে অন্তত চারবার পানি সেচ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য খাতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। অথচ সে তুলনায় তুলার মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। তারপরও আমরা তুলা চাষ করছি। কারণ এর সঙ্গে গ্রামের বহু মানুষের জীবিকা জড়িত।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ঝালকাঠি কটন ইউনিট অফিসার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, তুলাবীজ সাধারণত আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বপন করা হয়। তবে দক্ষিণাঞ্চলে ওই সময় মাঠে পানি থাকায় শুধু উঁচু জমিতে তুলা চাষ করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি আশ্বিন-কার্তিক মাসে যেন বীজ বপন করা যায় এমন তুলার বীজ উদ্ভাবন করতে। এ বিষয়ে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ চলছে। আশা করছি নিচু জমিতেও তুলা চাষ সম্ভব হবে। তাহলে আমাদের বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করতে হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, চলতি মৌসুমে ঝালকাঠিতে ৭০ একর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। আমরা কৃষকদের তুলা চাষে উৎসাহিত করছি। এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য তুলা চাষ হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনা। কেউ তুলা চাষে আগ্রহী হলে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেই।
মো.আতিকুর রহমান/আরএ/আরআইপি