ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গুডস হিলে চলতো নির্যাতনের উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৩ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৫

নির্যাতনের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের গুডস হিল। আর এ গুডস হিলেই চলতো নির্যাতনের উৎসব। এটি সাকা চৌধুরীর বাড়ি। নগরীর গনি বেকারি এলাকায় অবস্থিত অনেক নির্যাতনের স্বাক্ষী এটি।

তরুণ বয়সে সেই নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা মনে করে এখনো শিউরে উঠেন মো. সলিমুল্লাহ। গুডস হিল থেকে মুক্ত হওয়ার পর সেটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

একাত্তরে গুডস হিলকে আল-শামস বাহিনীর নির্যাতন ক্যাম্প বানিয়েছিল ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।  ফজলুল কাদের ছিলেন মুসলিম লীগের তৎকালীন নেতা এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। ফজলুল কাদেরের নির্দেশে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার বাহিনীর লোকজন একাত্তরে মুক্তিকামী সাধারণ বাঙালি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে গুডস হিলে নির্যাতন করত।

সলিমুল্লাহ’র ভাষায়, অসহায় বাঙালিদের নির্যাতন করাটা ছিল সালাহউদ্দিন কাদের ও তার বাহিনীর কাছে এক ধরনের উৎসবের মতো।  এরা বাঙালিদের ধরে আনত। তারপর সবাই মিলে নির্যাতনের উৎসব করত।

মুক্তিকামী বাঙালিকে নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় সেই গুডস হিল এখনো দাঁড়িয়ে আছে। চট্টগ্রামের মানুষ এখনো সেই গুডস হিলের সামনে দিয়ে হাঁটতে গিয়ে অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।  কারো কারো কাছে গুডস হিল রাজাকারের টর্চার সেল।  আর কারো কারো কাছে গুডস হিল এক বধ্যভূমি।

যে গুডস হিল ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন সলিমুল্লাহ। সেটাকে নিয়ে নতুন এক প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি, যে প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছেও।

সলিমুল্লাহ বলেন, গুডস হিল ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। পরে ভেবেছি না এটা ঠিক হবেনা। রাষ্ট্রের উচিৎ গুডস হিল নিজেদের দখলে নেয়া। তারপর সেই পাহাড়ে একটি মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সেই জাদুঘরে নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা যাবে। তারা সেখানে সালাহউদ্দিন কাদেরের টর্চার সেল দেখবে, নির্যাতনের কাহিনী শুনবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানবে।

২০১১ সালের ১২ এপ্রিল সলিমুল্লাহকে নিয়ে গুডস হিলে যান ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল। সলিমুল্লাহ সেখানে ফজলুল কাদের ও তার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদেরের গড়ে তোলা টর্চার ক্যাম্প দেখিয়ে দেন এবং নির্যাতনের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দেন। এ সময় নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত হিসেবে চারজনের নাম প্রকাশ করেন তিনি।  

এরা হলেন, সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী (বর্তমানে প্রয়াত), বিএনপির সাবেক হুইপ ও বর্তমানে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ওয়াহিদুল আলম, তৎকালীন আল-শামস বাহিনীর প্রধান খোকা ও মাহবুবুল আলম।

গুডস হিলে আটক করে নিয়ে যাবার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন, একাত্তর সালে নগরীর অভয়মিত্র ঘাটে আমি পারিবারিক একটি প্রিণ্টিং প্রেস চালাতাম। সেখানে কর্মচারীরা সবাই ছিল বোয়ালখালী থেকে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। একাত্তরের ২ এপ্রিল সকালে আমার দু’জন কর্মচারীকে ধরে গুডস হিলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ছাড়ানোর জন্য আমি সন্ধ্যার দিকে গুডস হিলে যায়। সেখানে গিয়ে আমি গেইটে খোকা, মাহাবুব, ওয়াহিদ এবং সাইফুদ্দিন কাদেরকে দেখতে পাই।

তিনি বলেন, আমাকে গুডস হিলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে একটি বাসার ভেতর ঢোকানো হয়। এরপর সেখানে আমাকে উপর-নিচ করে বেঁধে রাইফেলের বাট দিয়ে পেটানো হয়। কতক্ষণ পিটিয়েছিল আমি জানিনা। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমাকে একটি অন্ধকার স্যাঁতস্যাতে কক্ষের ভেতর ফেলে রাখা হয়েছে। ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে আমি পানি পানি বলে চিৎকার করছিলাম। এরপর আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ি। সুবেহ সাদিকের সময় আমি কুকুরের ডাক আর গুলির আওয়াজে জেগে উঠি। এসময় এক সেনাসদস্য বাথরুম থেকে ফেরার পথে আমার মুখের উপর তার পাত্র থেকে অবশিষ্ট কিছু পানি ঢেলে দেন।

তিনি আরো বলেন, আমাকে মোটর গ্যারেজের যে দোতলা কক্ষে আটক রাখা হয়েছিল সেটির অন্য একটি কক্ষ থেকেও ভেসে আসছিল গোঙানির আওয়াজ।

তিনি বলেন, ৩ এপ্রিল সকাল ৯টায় তার কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের অনুরোধে তাকে গুডস হিল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

৭৩ বছর বয়সী প্রবীণ ব্যবসায়ী মো. সলিমুল্লাহ সিঅ্যান্ডএফ এজেণ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এবং পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এসএস/এমএস