তরমুজের পিস ৪০ টাকা
পটুয়াখালীর উপকূলজুড়ে তরমুজের হাট বসেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু তরমুজের হাট। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধুই তরমুজ আর তরমুজ।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চাষি আকবর হোসেন বাজারে ৪ হাজার পিস তরমুজ নিয়ে এসেছেন। তিনি সেগুলো বিক্রি করেন ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়েছে ৪১ টাকা।
অথচ ফুটপাতে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। চাষির ট্রলার থেকে আড়তঘর ঘুরে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত তিন হাত বদলেই তরমুজের দাম হয়ে যাচ্ছে প্রায় তিনগুণ।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর পটুয়াখালী জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে একমাত্র দুমকি উপজেলা ব্যতীত বাকি সাতটি উপজেলায় ১৩ হাজার সাতশ ১৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হয়েছে সর্ব দক্ষিণের উপজেলা রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এ উপজেলায় আট হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে।
এছাড়া জেলার গলাচিপায় চার হাজার হেক্টর, কলাপাড়ায় পাঁচশ ১৫ হেক্টর, দশমিনায় চারশ হেক্টর, বাউফলে দুইশ ৭৫ হেক্টর, পটুয়াখালী সদরে ১৮ হেক্টর ও মির্জাগঞ্জে পাঁচ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়।
একটানা তিন থেকে চার মাস কৃষকের হাড়ভাঙ্গা পরিচর্যার পরে চৈত্রের মাঝামাঝির দিকে বাজারে উঠে পছন্দীয় ফল তরমুজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর প্রতি হেক্টরে ৩৫ মেট্রিক টন হারে ফলন উৎপাদন হয়েছে।
এবছর তরমুজের ফলন ও দাম দুটিই ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। এর ফলে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূলের কৃষকদের মধ্যে তরমুজ চাষে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ অঞ্চলের তরমুজের গুণগতমান ভালো হওয়ায় দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছেন চাষিরা। ফলে এ অঞ্চলের তরমুজের চাহিদাও দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই তরমুজ এখন এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসলের স্থান দখল করে নিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাটে-ঘাটে তরমুজের ছড়াছড়ি। কেউ ট্রলি থেকে তরমুজ নামিয়ে ঘাটে স্তূপ করছেন। কেউবা ঘাট থেকে লঞ্চ কিংবা কার্গোতে উঠাচ্ছেন তরমুজ। আবার কেউ বাজারজাত করতে নৌযানে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা এলাকায় বিক্রির জন্য জনবহুল বাজারগুলোতে তরমুজের হাট বসিয়েছেন। তবে ঘাটে প্রতি পিস তরমুজের মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ টাকার উপরে ওঠে না। ফলে এই দামেই তরমুজ বিক্রি করছেন চাষিরা।
রাঙ্গাবালীর কাউখালী গ্রামের তরমুজ চাষি আবুল বাশার বলেন, আমি এবছর ২৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। তাতে আমার খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকা। এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি এবং ক্ষেতে এখনও যে তরমুজ রয়েছে তাতে আরও পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে। পিস হিসেবে প্রতিটি তরমুজের দাম ৪০ টাকা হারে বিক্রি করতে হয়।
কাজির হাওলা গ্রামের তরমুজ চাষি আব্দুল করিম হাওলাদার বলেন, এ অঞ্চলের তরমুজ খেতে সুস্বাদু। আকার বড় ও রঙ লাল টুকটুকে হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এ অঞ্চলের তরমুজ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে এখানকার তরমুজের চাহিদা বেশি। দামও কম।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হৃদয়েশ্বর দত্ত বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ অঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা খুশি। এবছর তরমুজ চাষে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। তবে মোকামে তরমুজের দাম একটু কম পায় চাষিরা।
এএম/আরআইপি