ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কয়রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট

প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৫

অতিবর্ষণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় খুলনার আইলা কবলিত কয়রা উপজেলার সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির আমন ফসলের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।  পরপর দুই দফায় আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

কৃষকরা জানায়, আষাড় মাসে প্রথম দফায় বীজতলা তৈরি করে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কয়েকদিন যাবৎ বীজতলা পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।  দ্বিতীয় দফায় আবারও চড়া দামে বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করে ও পানি নিষ্কাশনের অভাবে একইভাবে নষ্ট হওয়ার পথে।  ফলে পুনরায় বীজতলা তৈরি করে ধান রোপন করতে পারবে কিনা সেই শঙ্কায় ভুগছেন চাষিরা।

সূত্রে জানা যায়, আইলার ৩/৪ বছর পর উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় আমন চাষ শুরু হলেও গত বছর থেকে পুরোদমে আমন চাষ শুরু হয়।  সরকারের বিভিন্ন সহায়তা ও অনুকূল পরিবেশে এ উপজেলায় গত বছর ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিলো এবং লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছিল।  একারণে কৃষকরা আমন চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হয়ে চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ নিয়ে জমিতে বীজ তলা তৈরি করেছিল যা ইতোমধ্যে প্রায় ৭৫ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।  বাকিটা নষ্ট হওয়ার পথে। এভাবে অবিরাম চলতে থাকলে সম্পুর্ণ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে।

প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরপর দুইবার বীজতলা নষ্ট হওয়ায়, একদিকে ধান রোপন মৌসুম শেষ হওয়া অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেদের আর্থিক সংকটে এ বছর আমন উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  বিশেষ করে উপজেলা সদর ইউনিয়ন, মহারাজপুর ইউনিয়ন ও বাগালী ইউনিয়নের সম্পূর্ণ বীজতলা পানির নিচে নষ্ট হয়ে গেছে।  এছাড়া আমাদী, মহেশ্বরীপুর, উত্তরবেদকাশী, দক্ষিণবেদকাশী ইউনিয়নের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।  ফলে উপজেলার সকল কৃষকের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে।  এ ব্যাপারে কৃষকরা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন।

কৃষকরা জানায়,পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলে এ ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগ ধানের তেমন ক্ষতি করতে পারেনা।  কিন্ত সরকারি জলাশয়গুলো বন্দোবস্ত ও ইজারা নিয়ে কতিপয় মহল সরকারি নিয়ম না মেনে জনসাধারণের পানি নিষ্কাশনের জলাশয়গুলোতে খণ্ড খণ্ড বাধ ও নেটপাটার মাধ্যমে জনসাধারণের পানি সরবরাহের পথ অবরুদ্ধ করে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে।

বাগালী এলাকার বাসিন্দা রামপদ বাহাদুর জানান, নিজের ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষের লক্ষ নিয়ে প্রথম দফায় ৪ বস্তা ধানের বীজতলা তৈরি করেছিলাম।  কয়েকদিনের পানিতে তলিয়ে সেটা নষ্ট হওয়ার পর দিতীয় দফায় বীজ সংকটে দিগুণ টাকায় (১০ কেজির ১ বস্তা ৬শ টাকায়) বীজ কিনে পুনরায় নুতন করে ৩ বস্তা ধানের বীজতলা তৈরি করি।  কিন্ত সেটাও সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।  

তিনি আরো জানান, বর্তমানে পানি নিষ্কাশনের অভাবে পুরো বাগালী ইউনিয়নের বামিয়া, বাসখালী, তালবাড়িয়া, কাটনিয়া, অর্জুনপুর, বৈরাগীরচক, শরিষামুট, বাকিনগর, বগামালিখালী, গুপিরায়ের বেড়, ফতেকাটি, বারোপোতা নারায়ণপুরসহ আরো কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৮ হাজার বিঘা কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

এ এলাকার শতাধিক কৃষক জানান, কয়রার হেতাল খালিয়া বিল, ফুলতলা বিল, বাজন্দারপাড়া বিল, ব্রাকের বিলসহ এখানকার আশপাশের সমস্ত আমন চাষের জমি বর্তমানে ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে।  বৃহত্তর মহারাজপুর ও কয়রা সদর ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর আমন ধানের জমি শুধুমাত্র পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে এতবড় ক্ষতিতে পরিণত হয়েছে।
 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবির জানান, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য ৭ ইউনিয়নে অবৈধ নেট পাটা অপসারণে ইতোমধ্যে মাইকিং করা হয়েছে।  এতে কাজ না হলে থানা পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত নেট পাটা অপসারণ করানো হবে।

তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসন পানি নিষ্কাশনে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

আলমগীর হান্নান/ এমএএস/পিআর