ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রোগীর সেবাই তার নেশা

রিপন দে | মৌলভীবাজার | প্রকাশিত: ১২:১৬ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮

একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে বা বাঁচাতে শুধু চিকিৎসকেরই ভূমিকা থাকে না। এতে জোরালো ভূমিকা রাখেন নার্স, অায়া ও ওয়ার্ড বয়রাও। তবে সবার শুরুতে অবদান থাকে একজন অ্যাম্বুলেন্স চালকের। তার কারণেই একজন আশঙ্কাজনক রোগীর দ্রুত চিকিৎসা করার সুযোগ পান চিকিৎসক ও নার্স। তাই জাগো নিউজের এবারের অায়োজন রোগীর জীবন রক্ষাকারী অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নিয়ে।

সোহেল আহমদ (৪৫) পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক। শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে কর্মরত তিনি। জনবল সঙ্কট থাকায় একমাত্র চালক হিসেবে রাত দিন তাকে ছুটতে হয় রোগী নিয়ে। এত কাজের চাপ তবুও যখন ডাক পড়ে খাওয়া ঘুম ফেলে রোগী নিয়ে ছোটেন সোহেল।

৯ বছর যাবৎ এই পেশায় আছেন সোহেল আহমদ। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, একজন রোগী যখন আমার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠে তখন মনে হয় সে আমার আপন কেউ। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কিভাবে নিরাপদে দ্রুত নিয়ে যাব। আবার দ্রুত গেলেও মাথায় থাকে রোগীর যেন কষ্ট না হয়।

জীবন বাঁচাতে যাদেরকে নিয়ে ছুটে চলা মাঝে মাঝে তাদের কেউ কেউ মারা যান। যদি কখনো কোনো রোগী মারা যায় তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। স্বজনদের সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখেও পানি আসে।

shuhel

সোহেল পেশাদার অ্যাম্বুলেন্স চালক হলেও অনেক রোগীকে বীনা পয়সায় গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। অনেক অসহায় রোগীর জন্য মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলেছেন।

তেমনি একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করে জানালেন, তিন বছর আগে একদিন ভোরে নামাজ থেকে ফিরে দেখেন হাসপাতালের সামনে গাছের নিচে বসে এক নারী কাঁদছেন। সামনে গিয়ে দেখতে পেলেন তার কোলে ফুটফুটে একটি শিশু কিন্তু তার মুমূর্ষু অবস্থা। ওই নারী তাকে বলেন, কয়দিন ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তার ছেলে। বাড়িতে চিকিৎসা দেয়ার পর গত রাতে অবস্থা খারাপ হলে শ্রীমঙ্গল ৫০ শয্যা হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। রাতে অবস্থার আরো অবনতি হলে ডাক্তার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেছে। কিন্তু তার সঙ্গে আছে মাত্র ৫০ টাকা আছে। স্বামী সুনামগঞ্জে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

পরে সোহেল তাদেরকে নিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে আসেন পুরোপুরি নিজ খরচে। বাচ্চাটার অবস্থার আরো অবনতি হলে মৌলভীবাজার হাসপাতাল থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। এ কথা শুনে মায়ের আহাজারি আরও বেড়ে যায়। সোহেলের পকেটেও মাত্র ২০০ টাকা আছে। উপায় না পেয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আশপাশের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলতে শুরু করলেন। মোট ২ হাজার ৪২৮ টাকা ওঠে। পরে একটা পরিচিত অ্যাম্বুলেন্স শুধুমাত্র গ্যাস খরচের টাকা দিয়ে সিলেট পাঠালেন।

সোহেলে ইচ্ছা ছিল সঙ্গে যাওয়ার কিন্তু চাকরির বাধ্যবাধকতা থাকায় যেতে পারেননি সেদিন। অ্যাম্বুলেন্স চালককে বলে দিলেন সিলেট হাসপাতালের সামনে ওনার পরিচিত একটি ফার্মেসিতে যেতে। পরিচিত ফার্মেসিতে ফোন করে সোহেল বলে দিলেন সব ওষুধের দাম তার নামে লিখে রাখতে এবং বাচ্চাটার চিকিৎসার ব্যাপারে সাহায্য করতে। সেভাবেই সব হলো। পরে একদিন সিলেট গিয়ে ফার্মেসির টাকা পরিশোধ করলেন নিজের বেতন থেকে।

এর একবছর পর সেই বাচ্চার বাবা অসুস্থ হয়ে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা হয় সোহেলর। ঠিক যেন নিজের হারানো সন্তান ফিরে পেয়েছেন সেই অনুভূতিতে বাচ্চাটিকে কোলে নেন। মানুষের সেবা করা কেবল তার পেশাই না বরং নেশায় পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি।

সোহেলের সম্পর্কে বলতে গিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো জাগো নিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স কিন্তু চালক একজন। একজন চালকের ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম কিন্তু সোহেল আহমদ একাই ৩ জনের কাজ করছেন। ২৪ ঘণ্টা ছুটে চলেন রোগী নিয়ে।

এফএ/এমএস

আরও পড়ুন