শাহজাদপুরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় ড. মযহারুল ইসলাম সেতু
অবশেষে শাহজাদপুর উপজেলার উত্তর-পূর্ব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হতে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শাহজাদপুর উপজেলার করতোয়া নদীর ওপর প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ড. মযহারুল ইসলাম (প্রস্তাবিত) সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন বাকি রয়েছে কেবল সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ। সেতুটির উদ্বোধন হলে শাহজাদপুর উপজেলাসহ গাড়াদহ ইউনিয়নের নবীপুর, চরনবীপুর ও নরিনা ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩১৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু ও ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়িয়েছে। ইউনিয়ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। আর এটি নির্মাণ করছে ইসলাম ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৬১ লাখ ৯৫ হাজার ২২৫ টাকা। ৩৫ মিটার দূরত্বে নয়টি স্প্যান ও ১৬টি পিলারের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেতুর মূল কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এখন সেতুর দুই পাসে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে, যা আগামী মাসেই শেষ হলেই চলতি বছরেই আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সেতুটি নির্মাণের শুরু থেকেই স্থানীয়রা বিশ্ববরেণ্য ফোকলোরবিদ অত্র এলাকার কৃতি সন্তান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের নামে এটির নামকরণের দাবি জানিয়ে আসছে।
গাড়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলা পরিষদের সাধারণ সভায় ড. মযহারুল ইসলামের নামে এই সেতুর নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতুটির উদ্বোধন হলে শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের নবীপুর, চরনবীপুরসহ চরাঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. নাসির জানান, সেতু চালু হলে করতোয়া নদীর পূর্ব পারের সঙ্গে উপজেলা সদরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। পাশাপাশি প্রতিবেশী উপজেলা উল্লাপাড়া ও বেলকুচিসহ সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আহমেদ রফিক জানান, আগামী এক মাসের মধ্যেই সেতুর সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এ বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে। নামকরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে ড. মযহারুল ইসলামের সুযোগ্য সন্তান চয়ন ইসলাম সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে উপজেলা পরিষদের সভায় ও তৎকালীন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নির্দেশে ড. মযহারুল ইসলামের নামে সেতুর নামকরণের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল। প্রস্তাবনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছিল। পরে অবশ্য এই নামকরণের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় নাই।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রফেসর মযহারুল ইসলামের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ সভায় যোগ দিতে তার শাহজাদপুরের বাসভবনে আসেন। স্মরন সভা শেষে খাবার টেবিলে মাননীয় মন্ত্রীকে নামকরনের কথা তুলে ধরেন প্রফেসর মযহারুল ইসলামের অনুজ ড. আব্দুল খালেক। মন্ত্রী এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় এমপি হাসিবুর রহমান স্বপনকে নির্দেশ দেন এবং তিনি নিজে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বলে দেন।
উল্লেখ্য, এই গাড়াদহ ইউনিয়ন তথা শাহজাদপুর উপজেলার কৃতি সন্তান প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র চয়ন ইসলাম এই এলাকার দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। গত সংসদে এমপি থাকার সময়ে শেষ দিকে তারই অক্লান্ত চেষ্টায় এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ড. মযহারুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ কন্যা ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ড. ইসলামের ছোট ভাই প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য। আরেক ভাই নজরুল ইসলাম সরকারের সাবেক সচিব ও বর্তমানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এমবিআর/জেআইএম