যতক্ষণ পড়লেন ততক্ষণ কাঁদলেন তিনি
স্মার্টফোন ও ফেসবুক ব্যবহার না করায় নিজেকে নিয়ে জাগো নিউজে প্রকাশিত নিউজ দুটি পড়ার সুযোগ হয়নি সাথী আক্তারের। অথচ সেই নিউজের প্রেক্ষিতেই ভাগ্য বদলে গেছে সাথী আক্তার ও তার দুই ছেলে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের।
ছেলেদের পড়ালেখা ও সংসারের খরচ জোগাতে দু’দিন আগেও রাজধানীর শ্যামলী ওভারব্রিজের নিচে স্কুলড্রেস পরিহিত দুই ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষা করতেন স্বামীহারা এই নারী। বড় ছেলে সাকিব ও ছোট ছেলে তামিমকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার তাগিদে কোনো উপায় না পেয়ে মানুষের কাছে হাত পাততেন তিনি।
বিষয়টি এই প্রতিবেদকের নজরে এলে গত রোববার বিকেলে ‘কোনো সাকিব-তামিম মাঠ কাঁপায়, কোনো সাকিব-তামিম ভিক্ষা করে’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন যাওয়া শুরু করে সাথী আক্তারের কাছে।
সংবাদটি প্রকাশের দুই ঘণ্টার মধ্যে সাকিব ও তামিমের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে জাগো নিউজ কার্যালয়ে কল করেন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইউএস বাংলা গ্রুপের পরিচালক মাহবুব ঢালি। এরপর তিনি সাথী আক্তারের সঙ্গেও কথা বলে একই প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর মঙ্গলবার দুপুরে জাগো নিউজ কার্যালয়ে আসেন সাকিব, তামিম ও তাদের মা সাথী আক্তার। এর কিছুক্ষণ পরেই আসেন ইউএস বাংলা গ্রুপের পরিচালক মাহবুব ঢালি।
জাগো নিউজ কার্যালয়ে প্রবেশ করেই সাথী আক্তার জানতে চাইলেন, স্যার আমারে নিয়া কি নিউজ লিখছিলেন আপনারা, দুদিন ধরে ফোন ধরে তাল পাই না। আমারে কি নিউজটা দেয়া যাইবো, পড়ুম। যাকে নিয়ে এতকিছুর আয়োজন তিনিই তার নিউজ পড়েননি, বিষয়টি শুনে একটু অবাক হলেন প্রতিবেদক।
সঙ্গে সঙ্গে নিউজ দুটি প্রিন্ট করে দেয়া হয় সাথী আক্তারকে। প্রিন্ট কপি হাতে পেয়েই নিউজটি পড়া শুরু করলেন তিনি। শুরুতেই গভীর মনোযোগ দিলেন। কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল তিনি শাড়ির আঁচল দিয়ে প্রথমে বাম চোখ, পরে ডান চোখ মুছছেন। এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না তিনি। প্রায় শব্দ করেই কান্না করতে লাগলেন। তার এই কান্নায় রুমের সবাই অবাক হয়ে তাকালেন, হঠাৎ কি হলো এই ভেবে। এক পর্যায়ে চেয়ারের হাতলে মাথা রেখে কান্না শুরু করলেন তিনি। মায়ের কান্না দেখে সন্তানদের চোখও ছলছল করতে লাগলো। বুঝতে পাড়ছে না তাদের মা কেন কাঁদছে?
প্রায় ৫ মিনিট কান্না করার পরও নিজেকে সামলে নিতে পারছিলেন না সাথী আকতার। কেন কাঁদছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জীবনের কষ্টগুলো এতো সুন্দর করে ফুটাইয়া তুলছেন সেগুলো মনে পড়েই চোখ দিয়া পানি আসতাছে। অথচ এগুলান কথা কাউকে বলতে পারি নাই। কেউ নাই আমার। কতদূর লেখাপড়া করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাইভ পর্যন্ত পড়ছি।
সাথী আক্তারের বয়স যখন তিন বছর তখন তার বাবা মারা যান। অসহায় হয়ে যায় তাদের পরিবারটি। এরপর মায়ের কষ্ট করা আয়ে বড় হতে থাকে সাথী আক্তার। দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ে সংসার চালানো। এক পর্যায়ে ২য় বিয়েতে বসেন তার মা। সেই সংসারে পূর্ব থেকে স্ত্রী ও সন্তান ছিল তার সৎ বাবার। সেখানে কোনো মতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি। এর কিছুদিন পরেই বিয়ে হয়ে যায় সাথী আক্তারের।
প্রসঙ্গত, ইউএস বাংলা গ্রুপের পরিচালক মাহবুব ঢালি, সাকিব ও তামিমের লেখাপড়াসহ সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি চাকরিও দেবেন বলে প্রতিশ্রুিতি দেন।
এমএএস/আরআইপি