ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
অল্প পরিশ্রম, কম খরচ ও বেশি লাভ পাওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন নওগাঁর কৃষকরা। সরকারি প্রণোদনা ও সহযোগিতায় পাওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। প্রতিকূল আবহাওয়া থাকলে ভালো ফলন পাবেন এমনটাই আশা করছেন ভুট্টা চাষীরা। কৃষি উপকরণ ও সহযোগিতা পেলে আগামীতে ভুট্টার আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছরে জেলায় রবি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ২২০ হেক্টর ও খরিপ ১, ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয় জেলার আত্রাই উপজেলায়। চলতি বছরে এ উপজেলায় ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। ৯৫০ জন কৃষককে পুর্নবাসন ও ৫০০ জন কৃষককে প্রণোদনা স্বরুপ দুই কজি বীজ, ডিএপি ২০ কেজি ও এমওপি ১০ কেজিসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ দেয়া হয়। এছাড়া ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর ও ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ করা হয়। প্রতি বছরই এ আবাদ বাড়ছে। এখন পর্যন্ত সুপার সাইন, মিরাক্কেল, ডন, ১১১ উন্নত জাতের ভুট্টা আবাদ করা হয়েছে।
জানা যায়, দিন দিন ভূগর্ভস্তরের পানিস্তর কমছে। কৃষিতে স্বল্প সময়ে কমপানিতে কৃষকদের রবি শষ্য আবাদের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। আত্রাই উপজেলা নিচু এলাকা হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে বন্যা পরবর্তী সময়ে অল্প পরিশ্রম, কম খরচ ও লাভ বেশি পাওয়ায় ভুট্টা আবাদে ঝুঁকেছেন চাষিরা। তাই ভুট্টা চাষে উজ্জ্বল সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
এ উপজেলায় মাঠ জুড়ে যেদিকে দু’চোখ যায় দিগন্ত বিস্তর জুড়ে শুধু ভুট্টা আর ভুট্টা। কোথাও ছোট, মাঝারি আবার কোথাও বড় বড় গাছ। কোনো কোনো গাছে আবার একটি দুটি করে ফল (ভুট্টার কান) এসেছে। আর এমন দৃশ্য উপজেলার অনেক মাঠ জুড়েই। ধান উৎপাদনে খরচ ও পরিশ্রম বেশি হলেও ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন কৃষকরা। তাই ধানের আবাদের পাশাপাশি ভুট্টা চাষের ঝুঁকছে এ উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলার সদুপুর গ্রামের আজাদ শেখ বলেন, এ বছর সাত বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। আবহাওয়া ভাল থাকলে সেই সঙ্গে সব ঠিক থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
একই গ্রামে মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বিঘাতে হাল চাষ, বীজ, সার, ওষুধ ও শ্রমিক দিয়ে প্রায় ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এছাড়া আলুর জমিতে ভুট্টার আবাদ করলে একটু খরচ কম হয়। বিঘা প্রতি ফলন হয় ৩৫-৪০ মণ। বাজারে দাম পাওয়া যায় ৬০০-৭০০ টাকা মণ। এ বছর দু’বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি।
বৈঠাখালি গ্রামে আফজাল হোসেন বলেন, ভুট্টার আবাদে রোগবালাই তেমন নাই। বোরো ধানের আবাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে ওইসব জমিতে ভুট্টা লাগানো হচ্ছে।
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাওছার হোসেন বলেন, প্রতি বছরই বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। গত দু’বছরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবাদ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে-ফলন বেশি পাওয়া।
প্রতি বিঘায় গড় প্রায় ৪০ মণের মতো ফলন হয়ে থাকে এবং বাজারে দামও ভাল। আরেকটি কারণ হচ্ছে-প্রতি বছর এ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়। ফলে জমি উর্বর থাকে। চারিদিক নদী হওয়ায় সেচ ব্যবস্থাও ভাল। আলু উঠানোর পর একই জমিতে কম খরচে ভুট্টা লাগানো যায়। এ বছর ভুট্টা লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আব্বাস আলী/আরএ/পিআর