শ্রেণিকক্ষ সংকটে বারান্দায় পাঠদান
শ্রেণিকক্ষ, পর্যাপ্ত বেঞ্চের অভাবে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চরকুশাবাড়ি-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায় বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে পাঠ নিতে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের চরকুশাবাড়ি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়ানোর ব্রত নিয়ে ১৯৭৯ সালে স্থাপিত হয় চরকুশাবাড়ি দুই রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ বিদ্যালয়ে দোচালা টিনের ঘরের দুইটি কক্ষে সেই সময় পাঠদান করা হতো গ্রামীণ শিশু শিক্ষার্থীদের। ১৯৯৪ সালে টিনের ঘরের জায়গায় একটি চার কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।
এরপরও শ্রেণিকক্ষ সংকটে বছরের পর বছর ধরে বিদ্যালয়ের বারান্দায় চলছে পাঠদান। ৪৪৫ জন ছাত্রছাত্রীর পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে তিন শিক্ষককে। পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে একজন প্রশিক্ষণে রয়েছেন। আরেকজন আছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।
বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বারান্দায় পাঠদান চলছে শিশু শ্রেণির ৪০ জন ছাত্রছাত্রীর। জায়গা স্বল্পতার কারণে দুই সারিতে গাদাগাদি করে বসে আছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। মাঝখানে সুবিধামতো বইখাতা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। প্রখর রোদ এসে পড়েছে শিশুদের শরীরে। বিদ্যালয়টির অফিস কক্ষের অবস্থা আরও শোচনীয়। একেবারে ছোট এ কক্ষটিতে পাঁচজন শিক্ষককে সঙ্কুচিত হয়ে বসতে হয়। কক্ষের ভেতরে হাঁটা-চলাও মুশকিল। স্থান সংকটে এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে বইখাতাসহ বিদ্যালয়ের যাবতীয় উপকরণ।
শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত পারভীন, মরিয়ম খাতুন, শাহানাজ পারভীন, নাহিদা খাতুন, হাবিব উল্লাহ জানায়, শ্রেণিকক্ষ সংকটে বছরের পর বছর ধরে তাদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় পাঠদান হয়। কখনও রোদে পুড়ে আবার কখনও বৃষ্টিতে ভিজে। বৃষ্টির পানিতে বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়। পড়নের পোশাকও ভিজে যায়। ঝড়ের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় শুরু হয় ছুটোছুটি। এভাবে পড়ালেখায় মনোযোগ নষ্ট হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল লতিফ শ্রেণিকক্ষের সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রতি বছরই বাড়ছে শিক্ষার্থী। বাড়ছে শিক্ষার মান। ফলাফলও ভালো হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিফটে চলছে পাঠদান। প্রথম শিফটে শিশু শ্রেণি, প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান হয়। দ্বিতীয় শিফটে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান চলে।
এরপরও শিশু শ্রেণির পাঠদান চলছে বারান্দায়। এতে পাঠদানে চরম বিঘ্ন ঘটছে। সরু ও ছোট অফিস কক্ষে তাদের বসা, হাঁটা-চলা, শিক্ষা উপকরণ রাখা দায় হয়ে পড়েছে। এ বিদ্যালয়টিতে আরও একটি ভবন হলে ভালো হয়।
চরকুশাবাড়ি দুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে তাড়াশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফকির জাকির হোসেন জানান, শিগগিরই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত আবেদন নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হবে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এএম/এমএস