বাবুল নয়, বিউটিকে হত্যা করেছে ময়না মিয়া
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ময়না মিয়া। বিউটি হত্যায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিতে তিনি রোমহর্ষক অনেক তথ্য দিয়েছেন।
আদালতের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে কেউই এ বিষয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। পুলিশের কোনও কর্মকর্তাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ময়না মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতার আলোচিত বাবুল মিয়া বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে একই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে (১৬) গত ২১ জানুয়ারি ধর্ষণ করেন একই গ্রামের ইউপি মেম্বার কলম চান বিবির ছেলে বাবুল মিয়া। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সায়েদ আলী। ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় সায়েদ আলীর ঘনিষ্ট আত্মীয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই বিউটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে নানারবাড়িতে।
১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি। পরদিন ১৭ মার্চ গুণিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ। এ ঘটনায় ১৮ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে সারাদেশ। পুলিশও হত্যার মোটিভ উদঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে।
প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। দ্বিতীয় দফায় চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাঝেই তিনি মোটিভ উদঘাটনে সক্ষম হন। বাবুল ও তার মা কলম চান বিবিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিউটির বাবা, মা, মামা, নানিসহ স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের।
অবশেষে বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষী ময়না মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসব জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে হত্যার মোটিভ। শেষ পর্যন্ত ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। প্রকাশ করেন জড়িত অন্যান্যদের নামও।
আদালত সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল ৫টায় ময়না মিয়াকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বিউটি হত্যার রোমহর্ষক তথ্য দেন। জানান হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা। আরও কারা জড়িত ছিল, কী দিয়ে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, কেন করেছে সব তথ্যই তিনি আদালতে প্রকাশ করেছেন।
হত্যার ঘটনায় বিউটির নানি ফাতেমা বেগম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর রাতে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গ্রেফতার বাবুল মিয়া। তিনি প্রথম দফায় বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে আদালতকে জানিয়েছেন। অপরদিকে বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে দুইদিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার রাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/আরএআর/পিআর