ফল হাতে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন কামরুল, ছিলেন মানববন্ধনেও
রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা (৫৮) নিখোঁজের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শনিবার দীপার সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় গিয়েছিলেন কামরুল ইসলাম। এ সময় বিভিন্ন ফলমূল নিয়ে দীপার হাতে দিয়ে তাকে সান্ত্বনাও দিয়েছিলেন।
এছাড়া বাবু সোনাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শনিবার ওই মানববন্ধনেও উপস্থিত ছিলেন কামরুল। খুনের ঘটনায় কেউ যেন তাকে সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিজেও প্রচার করেছিলেন বাবু সোনার বাড়িতে আসা লোকজনদের সামনে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধার ও কামরুলকে গ্রেফতারের পর স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা এ তথ্য জানান।
ওই এলাকার আব্দুর রহিম জানান, শনিবার সকালে বাবু সোনার নিখোঁজের বিষয়টি জানার পর তার বাড়িতে ছুটে যান তিনি। বিকেলের দিকে বিভিন্ন ফলমূল নিয়ে ওই বাড়িতে আসেন কামরুল। এ সময় দীপাকে ফল খেতে বলেন এবং সান্ত্বনা দিতে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুইদিন (শনি ও রোববার) কামরুল বাবু সোনার বাড়ি ও তার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছেন। এ সময় বাড়িতে আসা লোকজনদের সামনে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে নিজেও আলোচনা করেন। প্রচার করতে থাকেন যে বাবু সোনা নিখোঁজের ঘটনায় জামায়াত-শিবির বা জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এছাড়া তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শনিবার দুপুরের সেই মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচিতেও কামরুল ইসলাম নেতৃত্ব দেন বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা শরিফুজ্জামান।
তিনি বলেন, বাবু সোনাকে হত্যার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ছক কষেছিলেন তার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক ও পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হলো না। ধরা পড়তেই হলো।
তদন্ত সূত্রগুলোর তথ্য মতে, ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শনিবার চতুর স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক ২ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এছাড়াও তাদের নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে বাবুপাড়া এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করান।
তাজহাট মোল্লাপাড়ার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কামরুল ইসলাম মরদেহ গুম করার স্থান হিসেবে বেছে নেন তার বড় ভাই ঢাকায় বসবাসরত খাদেমুল ইসলামের নির্মাণাধীন বাড়ি। ওই বাড়িতেই মরদেহ গুম করার সিদ্ধান্ত হিসেবে ভিন্ন কথা বলে স্কুলের দুইজন ছাত্রকে দিয়ে গর্ত খুঁড়িয়ে নেন। এছাড়াও সেখানে তিনি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কোচিং ক্লাস করাবেন বলেও ছাত্রছাত্রীদের জানান।
তাদের ধারণা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কামরুল ওই বাড়িটি সংস্কারের নামে সেখানে মেঝে প্লাস্টার করে নিতেন এবং কেউ যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য কোচিং ক্লাস শুরু করে দিতেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিঞা বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। এ ঘটনায় দীপা ও কামরুলসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো আমরা যাচাই বাছাই করে দেখছি। যেসব তথ্য পেয়েছি তা তদন্তের স্বার্থে সাংবাদিকদের বলছি না।
প্রসঙ্গত, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ভাত ও দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাবু সোনাকে হত্যা করেন দীপা ও তার সহকর্মী তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল ইসলাম।
জিতু কবীর/এফএ/এমএস