মেয়েকেও ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলেন দীপা
রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও আওয়ামী লীগ নেতা রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনাকে (৫৮) ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি তার মেয়েকেও ওষুধ খাইয়েছিলেন দীপা ভৌমিক।
ওষুধ খাওয়ানোর পর বাবা-মেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে বাবু সোনাকে হত্যা করেন দীপা। আর এ কাজে সহায়তা করেন তার প্রেমিক ও সহকর্মী তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনার তদন্তে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) প্রয়োজনীয় কাজ শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাড়ি নগরীরর তাজহাট বাবুপাড়ায় ফেরেন বাবু সোনা। এরপর আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবু সোনাকে খাওয়ান স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ওরফে দীপা ভৌমিক। একই সঙ্গে তার একমাত্র মেয়েকেও খাবারের সঙ্গে তিনটি ঘুমের ওষুধ খাওয়ান।
সূত্রটি জানায়, ঘটনার দুই ঘণ্টা আগে থেকেই বাবু সোনার শোয়ার ঘরের পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন কামরুল ইসলাম। ওষুধ খাওয়ানোর পর বাবা-মেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে কামরুল ঘরে ঢুকে দুজনে মিলে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন।
এদিকে বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার দুপুরে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দুই মাস ধরে।
তিনি জানান, বাবু সোনা নিখোঁজের পর শনিবার কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। উক্ত জিডির সূত্র ধরে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে বাবু সোনার ছোটভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল রোববার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি এ হক্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং মরদেহের অবস্থান সম্পর্কে জানান।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীপা জানিয়েছেন, মূলত পরকীয়া প্রেম, পারিবারিক কলহ, সন্দেহ ও অশান্তি থেকেই স্বামী বাবু সোনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দুই মাস আগে থেকে। আর এ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন একই স্কুলের শিক্ষক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবু সোনার মেয়ে বনভোজনে অংশ নিতে তার ফুফুর সঙ্গে রংপুরের বাইরে যান। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাবার নিখোঁজের খবর জানতে পারেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবু সোনার একমাত্র ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাবু সোনার ছোটভাই পরিবারসহ ওইদিন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। বাড়িতে মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ না থাকায় তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন দীপা। মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে এই সুযোগে কামরুলের সহায়তায় বাবু সোনাকে হত্যা করেন দীপা।
এর আগে নিখোঁজের ৫দিন পর মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে নিজ বাড়ি তাজহাট বাবুপাড়া থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার শিক্ষক কামরুল ইসলামের ঢাকায় বসবাসরত বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মাটি খুঁড়ে বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব। পরে তা শনাক্তের জন্য বাবু সোনার ছোটভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল ও স্ত্রী দীপাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা গিয়ে বাবু সোনার মরদেহ শনাক্ত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কামরুল ইসলামের পৈত্রিক নিবাস হচ্ছে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মোল্লাপাড়া এলাকায়। তিনি স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে সন্তানকে নিয়ে নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায় বসবাস করলেও মোল্লাপাড়ার বাড়িতেও নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
জিতু কবীর/আরএআর/পিআর