একজন সুখী মানুষের গল্প
ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে সমাজে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবেন। অন্যের উপর নির্ভরশীল না থেকে নিজেই স্বাবলম্বী হবেন। তাই নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। জীবনযুদ্ধে হার না মানা আত্মপ্রত্যয়ী মো. খলিল জোমাদ্দার (৪৫)। পেশায় একজন ভ্যানচালক। শহরের মাছঘাট এলাকায় বসবাস করেন তিনি।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের শারিক খালী গ্রামের আবদুর রশিদ জোমাদ্দারের ছেলে খলিল। জন্মের পর থেকেই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটতো তার। তাই পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে ছয় বছর বয়সে মাছের আড়তে পিয়নের কাজ শুরু করেন তিনি।
ভ্যানচালক মো. খলিল জোমাদ্দার বলেন, স্বাধীনতার সময় আমার আড়াই বছর বয়স ছিল। জন্মের পর থেকেই অভাব অনটনে কাটে পুরো জীবন। দেশ স্বাধীনের পর বাবা-মা আমাদের তিন ভাই ও এক বোনকে নিয়ে শহরে আসেন। রুমী কাউন্সিলরের বাবা ফৈজদারী পুল এলাকায় তাদের বাসায় আমাদের থাকার জন্য জায়গা দেন। বাবা অসুস্থ ছিলেন, কিছুই করতে পারতো না। মা মানুষের বাসায় কাজ শুরু করেন। তাতেও আমাদের সংসার চলতো না। তাই ছয় বছর বয়সে মাছের আড়ৎ ৫শ টাকা বেতনে কাজ শুরু করি।
মাছের আড়ৎ থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া শুরু করলে ১৯৯৩ সালে হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয়। এর কয়েক বছরের মাথায় এই দম্পতির ঘর আলো করে আসে মেহেদী হাসান ও ফজলে রাব্বি। কিন্তু ১৯৯৯ সালে শহরে মাছের আড়তে ধস নামে। তখন বেকার হয়ে পড়েন তিনি। লঞ্চঘাটে কাজ শুরু করেন। তাতেও সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করে ২০০১ সালে ৪ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে প্রথম ভ্যান কেনেন। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সকালে লঞ্চঘাটে অনেক মালামাল বেশি, আয়ও বেশি। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয় তার। আর তা দিয়েই চলে তার সংসার।
ভ্যানচালক খলিল আরও বলেন, সারাদিন পর রাতে বাড়ি ফিরে ভ্যানের বেলের শব্দ শুনে ঘর থেকে দৌড়ে বের হয় স্ত্রী। বের হয়ে হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা হাসিমুখে নেয়। আল্লাহ্ আমাকে দুই ছেলে ও ভালো বৌ দিয়েছেন। এতেই আমি খুশি।
তিনি আরও বলেন, জীবনে কোনো কিছু করতে পারি নাই। এক টুকরা জমিও না। আমি ও আমার স্ত্রী নামও লিখতে পারি না। তাই স্বপ্ন দেখতাম ছেলে দুইটারে লেখাপড়া শেখাব। আল্লাহর রহমতে আজ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বড় ছেলে মেহেদী ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগদান করেছে। আর ছোট ছেলে রাব্বি শহরের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে।
ভ্যানচালক খলিল আরও বলেন, ছেলেদের মানুষ করার জন্য কাজ করছি। বিনিময়ে তাদের কাছে আমার কোনো চাওয়া নেই। যতদিন বাঁচব নিজের চেষ্টায় বাঁচতে চাই। এই ভ্যানই আমার সম্বল।
ভ্যানচালক খলিলের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। তয় আমার স্বামীর মতো মানুষ হয় না। সে সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে আমাদের ভালো রাখার জন্য। আল্লাহর রহমতে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে আছি।’
এফএ/আরআইপি