লোকসানের শঙ্কায় পঞ্চগড়ে কমছে তরমুজ চাষ
পঞ্চগড়ে তরমুজ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। প্রতিকূল আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ভেজাল বীজের কারণে কয়েক বছর ধরে লোকসান গুণছেন স্থানীয় তরমুজ চাষিরা। ফলে প্রতি বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় কমে যাচ্ছে তরমুজের আবাদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কিছুটা আগে ভাগে তরমুজ চাষ করা হলে লোকসানের আশঙ্কা থাকবে না বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
মঙ্গলবার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ, হাড়িভাসা, চাকলাহাটসহ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এসব এলাকায় তরমুজের আবাদ কমে গেছে। পূর্বে যে জমিতে তরমুজ আবাদ করা হতো এখন সেখানে বোরো, উন্নত জাতের টমেটো আর ভুট্টা চাষ করা হচ্ছে। এসব এলাকার অধিকাংশ কৃষক গত তিন বছর ধরে তরমুজ চাষ করে লোকসান গুণেছেন। একই সময়ে একই পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের টমেটো আবাদ করে দ্বিগুণ লাভ করেছেন অনেক কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জেলার মোট ৬৭৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। গত মৌসুমে চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে। আর চলতি মৌসুমে মাত্র ৪৮৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। আগামী মৌসুমে এই আবাদ আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মারুপাড়া গ্রামের একটি তরমুজ খেতে ছবি তুলতে গেলে এগিয়ে আসেন তরমুজ চাষি আল আমিন। তিনি বলেন, দুই বছর আগে তরমুজ চাষ করে অনেক টাকা লোকসান করেছি। গত বছর তরমুজ চাষ করিনি। এবার ২২ হাজার টাকা খরচে মাত্র তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছি। এখন ফল আসতে শুরু হয়েছে মাত্র। কী হবে বলা যাচ্ছে না।
একই এলাকার ষাটোর্ধ্ব কৃষক সমশের আলী বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে আমাদের গোটা হাফিজাবাদ ইউনিয়নের কৃষকদের মূল আবাদ ছিল তরমুজ। কৃষকরা তরমুজ চাষ করে এক সঙ্গে অনেক টাকা আয় করতেন। তখন ভেজালমুক্ত বীজ পাওয়া যেতো। ফলন ও দামও পাওয়া যেতো ভালো। আমাদের এলাকার অধিকাংশ কৃষক এই মৌসুমে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করে নতুন ঘর বাড়ি করতেন, মেয়ে বিয়ে দিতেন। এছাড়াও বড় ধরনের আর্থিক সমস্যা সমাধানসহ নিজেদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়েছেন এই তরমুজ চাষ থেকে। তবে গত ৩/৪ বছর ধরে নানা কারণে এখানে তরমুজের আবাদ কমে গেছে। বিশেষ করে ভেজাল বীজের কারণে আমার এলাকার অনেকেই তরমুজ চাষ করে লোকসান করেছেন।
হাড়িভাসা ইউনিয়নের দলুয়াপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি সেরাজুল ইসলাম বলেন, আমি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে প্রতিবছর তরমুজ চাষ করি। গত বছর অন্যের ১৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে মোট ২০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ছয় লাখ টাকার কাছাকাছি তরমুজ বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু অন্য কৃষকরা কেউ খরচের টাকাও তুলতে পারেননি। এবারও পঞ্চগড় চিনিকলের ২০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ চাষ করেছি। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। কেবল ফলন আসতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টির কারণে তরমুজ খেতটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার কী হবে জানি না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল হক বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় তরমুজ চাষে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। তাছাড় অসময়ে বৃষ্টিপাতসহ প্রাকৃতিক নানান দুর্যোগে ক্ষতির শঙ্কা। তবে কিছুটা আগে ভাগে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) তরমুজ আবাদ করলে লোকসানের আশঙ্কা কম থাকে।
তিনি জানান, কৃষকরা এখন উন্নত জাতের টমেটো এবং ভুট্টা চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন। এলাকায় তরমুজ চাষ কমে যাওয়ার এটাও একটি অন্যতম কারণ।
সফিকুল আলম/আরএআর/জেআইএম