ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কক্সবাজারে পাহাড় ধস : সন্ধান মেলেনি আরো ৩ জনের

প্রকাশিত: ০৩:৩৫ এএম, ২৭ জুলাই ২০১৫

কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউস সংলগ্ন রাড়ার স্টেশন পাহাড়ের একাংশ ধসে মাটিচাপা পড়া মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাটিচাপায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো তিনজন। এ ঘটনায় কলেজ ও স্কুল শিক্ষার্থীসহ চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার গভীর রাতে শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া কবরস্থান পাড়ায় এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। নিহত মা-মেয়ে হলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল আমিনের স্ত্রী লুৎফুন নাহার জুনু (২৫) ও কন্যা নীহা মনি (৬)।



পাহাড় ধসের খবর পেয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে এসে যোগ দেন সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির একটি টিম।

সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে মৃত জাফর আলমের ছেলে শেয়ায়েত হোসেন (১৪) ও জাকের হোসেনের ছেলে নুরুন নবীকে (১৭) জীবিত উদ্ধার করেন। প্রতিবেশি ও নিজেদের চেষ্টায় ধ্বংসস্তুপ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন জহিরুল হকের মেয়ে শারমিন আকতার (২০),  খায়রুল আমিনের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়াত (১০)।

মাটিচাপা থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া কক্সবাজার তৈয়বিয়া তাহেরিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শেফায়েত হোসেন (১৪) জাগো নিউজকে জানান, খাবার খেয়ে অন্যরা ঘুমিয়ে গেলেও সে রাত জেগে পড়ছিলো। রাত ২টার দিকে বাড়ির পূর্বপাশ থেকে হঠাৎ বিকট শব্দ হলে তিনি ভয় পেয়ে টেবিল থেকে উঠে বাইরে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই বাড়ির উপর পাহাড়ের মাটি এসে পুরো বাড়ি দুমড়ে মুছড়ে দেয়। দরজার কাছাকাছি থাকায় বাড়ির বাইরের একটি দেয়ালের কিনারে পড়েন তিনি ও তার ফুফাতো ভাই কক্সবাজার সরকারি কলেজের সদ্য এইসএসসি ক্লাসে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী নরুন্নবী (১৭)। এরপর তার আর কিছু মনে নেই।



কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ আব্দুল মজিদ জাগো নিউজকে জানান, রাড়ার স্টেশন পাহাড়ের একাংশ গাছসহ ধসে পড়ে পাদদেশের চারটি সেমিপাকা বাড়ি মাটি চাপা পড়েছে। এ ঘটনায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মা-মেয়ের দুটি মরদেহ ও মাটিচাপার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুজনকে জীবিত উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বাড়িগুলোর উপর প্রায় ১০ ফুট মাটিচাপা পড়ে আছে। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে পেকুয়া ও চকরিয়া সার্ভিস কর্মীগণ ও সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির একটি দল।

জীবিত উদ্ধার শাফায়েতের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, মাটি চাপায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বাড়ির মালিক শাহ আলম (৪৫), তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৩০) ও ভাতিঝি সদ্য এসএসসি পাশ করা রিনা আকতার (১৭)।

উদ্ধার কাজে যোগ দেয়া সেনাবাহিনীর কক্সবাজার ১৬ ইসিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মাহবুবের মতে, নিখোঁজ অন্যরা মাটির হয়তো একেবারে নিচে পড়ে আছেন। এজন্য তাদের খোঁজ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। পাশাপাশি উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বৃষ্টি।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, মাটিচাপা পড়ার পর অপর দুটি বাসায় বসবাস করা লোকজন ভাগ্যক্রমে নিজেদের চেষ্টায় বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। বিকেল নাগাদ নিখোঁজদের উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।



বাহারছরা এলাকার মুহাম্মদ মুরাদ জাগো নিউজকে জানান, পাহাড় ধসে প্রাণহানি রোধ করতে রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারিদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। আজ সোমবারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে অন্যত্র সরে যাবার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু রাত পার হবার আগেই পাহাড়ের মাটি বেশ কয়েকটি তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ এক বিবণরীতে সম্প্রতি প্রচার করে প্রবল বর্ষণে কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রামে যেকোনো সময় ভূমিধস হতে পারে।

এ খবর পেয়ে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল তাদের নিরাপদে সরে যেতে অনুরোধ করে আসেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, উদ্ধার তৎপরতায় পুলিশও সহযোগিতা করছে।

# কক্সবাজারে পাহাড় ধসে বেশ কয়েকটি বাড়ি চাপা পড়েছে

সায়ীদ আলমগীর/এমজেড/এমএস