ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামে একই পরিবারে ৫ জন অন্ধের করুণ দশা

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০১৮

কুড়িগ্রামে অসহায় একটি পরিবারের সাত সদস্যের ৫ জনই অন্ধ। বাবাসহ তিন সন্তান জন্মগতভাবে অন্ধ হলেও তাদের মা পরবর্তীতে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় অন্ধ হয়ে গেছেন। অর্থের অভাবে এই পরিবারটির কোনো সদস্যই অন্ধত্বকে দূর করার চেষ্টা করতে পারেনি। পরিবারটিতে আয় করার মতো কেউ না থাকায় বর্তমানে অনাহারে দিন কাটছে তাদের।

অন্ধ এই পরিবারটির বসবাস কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা চর সুভারকুটি গ্রামে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা শহিদার রহমান, স্ত্রী আসমা বেগম (৪০), মেয়ে সাইয়েদা সিদ্দিকা (১৬), শফিকা (১৪), শরিফা (৯) ও ছেলে মাসুমসহ (১১) ৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তবে সাইয়েদা সিদ্দিকা সুস্থ ও স্বাভাবিক। সে চরসুভার হলোখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়া বড় মেয়ে ছাবেরা সিদ্দিকার বিয়ে হয়ে গেছে গত বছর।

দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে শহিদার রহমান চর সুভারকুটি মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে ২ হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি। গত ২১ মার্চ সেই চাকরিও শেষ হয়ে গেছে তার।

পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিসহ ৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় একমাত্র পড়ুয়া মেয়েটিরও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন শহিদার রহমান।

শহিদারের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, ৫ সন্তানের মধ্যে ৩ জন জন্মগতভাবে অন্ধ। বেশ কয়েক বছর আগে আমার টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল। চিকিৎসা না করার কারণে আমারও চোখ অন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে স্বামীর কোনো আয় রোজগার না থাকায় খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে পরিবারটিকে। প্রায় সময় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার দেনা করলেও পরিশোধ করতে না পারায় বিরক্ত হয়ে গেছে এলাকাবাসী। এ কারণে তাদের অবস্থা আরও করুণ হয়ে গেছে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শফিকা, মাসুম ও শরিফা জানায়, স্বাভাবিকভাবে চলতে পারি না আমরা। স্কুলে ভর্তি হলেও পরীক্ষায় লিখতে না পারার কারণে বের হয়ে মাদরাসায় আরবি পড়ছি।

সংসারের অভাবের কারণে একমাত্র স্কুলপড়ুয়া সাইয়েদা সিদ্দিকার পড়াশোনাও বন্ধ হবার পথে। ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবে। ডাক্তার হয়ে তার পরিবারের মতো অস্বচ্ছল আর গরিব পরিবারগুলোর সেবা করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে বসেছে বলে জানায় সাইয়েদা সিদ্দিকা।

jagonews24

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, একই পরিবারের ৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর হবার বিষয়টি তার নজরে এসেছে।

তিনি বলেন, সম্ভবত Congenital Abnormal থেকে এটি হয়েছে। আক্রান্তদের কর্ণিয়া সংযোজনের মাধ্যমে এটি নিরাময় করা যায়। যা আমাদের দেশেই করা সম্ভব তবে তা ব্যয়বহুল।

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে রেফারেল লিংকেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবার উদ্যোগ নেবেন।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, এতোদিন বিষয়টি প্রশাসনের নজরে ছিল না। ঘটনাটি শোনার পর রোববার ওই পরিবারটির সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের অবস্থা খুবই করুণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

নাজমুল ইসলাম/এমএএস/আরআইপি

আরও পড়ুন