অ্যানিকে ভালোবেসে আজ আমি অন্ধ
তমালের সঙ্গে নয় মাস প্রেম করার পর অ্যানি জানায় কয়েক মাস আগেই বিয়ে হয়েছে তার। প্রেমিকার এমন জবাবে উত্তেজিত তমাল থাপ্পড় দেয় অ্যানিকে। ওই থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে তমালের মুখে অ্যাসিড মারে অ্যানির স্বামী সুমিত ও তার সহযোগীরা।
প্রেমের এমন পরিণতি কেউই প্রত্যাশা করে না। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে চট্টগ্রামের ছেলে তমালের সঙ্গে। দুই চোখ হারিয়ে আজ অন্ধ তমাল। ভারতে চিকিৎসা করিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে কথা হচ্ছিল তমালের সঙ্গে। শুক্রবার রাতে রাজধানী থেকে ঘাতক সুমিত ধর (৩০) ও মমিতা দত্ত অ্যানি (২৬) ধরা পড়ার খবরে সিএমপি কার্যালয়ে ছুটে আসে তমাল ও তার পরিবার।
তমাল বলেন, ঘটনার শুরু ২০১৫ সালের মার্চ মাসে। আমার বড় চাচার মেয়ের বিয়েতে পরিচয় হয় অ্যানির সঙ্গে। পরে কথা বলা, ঘুরতে যাওয়া। এর মাঝেই ঘটে মন দেয়া-নেয়া। চারমাস ভালোই কাটে আমাদের। বেশ খরচ করি তার পেছনে। হঠাৎ একদিন জরুরি কথা আছে বলে দেখা করতে চায় অ্যানি। গেলাম, এটা-ওটা বলার পর অ্যানি জানালো, অন্য আরেক ছেলের সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরে প্রেম চলছে তার। সেপ্টেম্বরে বিয়ে হয়েছে তাদের।
অ্যানির এমন অপ্রত্যাশিত জবাবে মেজাজ হারিয়ে বসি আমি। ওকে একটা থাপ্পড় মেরে বলি, আরেক জনের সঙ্গে তোমার প্রেম, তবে আমার জীবন কেন নষ্ট করলে?।
জবাবে অ্যানি হুমকি দিয়ে বলে, এ থাপ্পড়ের জবাব আমিও দেব। এই ঘটনার দেড় বছর পর অ্যানির স্বামী সুমিতের নেতৃত্বে আমার ওপর অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে। বলতে গেলে অ্যানিকে ভালোবেসে আজ আমি অন্ধ।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তমাল বলেন, অ্যানিকে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ২০১৬ সালের শেষের দিকে ‘প্রজাপতির ডানা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার কাছে রিকোয়েস্ট আসে। আমি রিকোয়েস্টটি একসেপ্ট করি। পরে তার সঙ্গে চ্যাটিংয়ে কথা হয়। জানায় সে কলকাতা থেকে বলছে। এভাবেই দুইমাস যাওয়ার পর ওই আইডি থেকে জানানো হয়, তার কাকার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে সে। দেখা করবে।
ফেসবুকেই নির্ধারিত হয় আমরা গুডস হিলের সামনে দেখা করবো। আমি সন্ধ্যার দিকে ওই এলাকায় পৌঁছাই। তখন দেখি দুইজন যুবক বেশ বড়বড় চোখ করে আমাকে লক্ষ্য করছে।
এদিকে আমি অপেক্ষা করছিলাম ‘প্রজাপতির ডানার’। তিন-চার মিনিট পর হঠাৎ ওই যুবকরা আমার মুখে অ্যাসিড মারে। তখন আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। সারা মুখ খুব বেশি জ্বলছিল। এর মাঝে একজনকে একটু আবছা আবছা চিনতে পারি। সে সুমিত। অ্যানির স্বামী।
তমাল আরও বলেন, আমি অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে যখন পানি পানি চিৎকার করছিলাম তখন একজন যুবক বলছিল, অ্যানির সঙ্গে প্রেম করার মজা দেখ।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী বলেন, মামলাটি আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। বেশ চালাক এই সুমিত ও তার সহযোগীরা। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তাদের গ্রেফতার করা গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া বলেন, গত বছরের এপ্রিলে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আসে মামলাটি। কিন্তু কোনোভাবেই এ দুইজনকে ট্রেস করা যাচ্ছিল না। শেষে গিয়ে খুব দুর্বল একটি সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে সুমিত ও অ্যানির ঠিকানা।
সিএমপি কার্যালয়ে তমালের বাবা বাবুল চন্দ্র দে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ভাসুরের মেয়ের বিয়েতে গেলে তমালের সঙ্গে অ্যানির পরিচয় হয়। তারা তিন-চার মাস একসঙ্গে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু তারও পাঁচ বছর আগে থেকে আরেকজনের সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে তমালের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তমাল রাগের মাথায় তাকে থাপ্পড়ও মেরেছিল। সেই থাপ্পড়ের জবাব তারা দিয়েছে অ্যাসিডে। আমি ওই দুইজনের ফাঁসি চাই।
এএম/জেআইএম