ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শিলা পাথরের আঘাতে ঝাঁঝরা বৃদ্ধ ভিক্ষুকের টিনের চালা

জেলা প্রতিনিধি | লালমনিরহাট | প্রকাশিত: ০৮:০২ পিএম, ৩১ মার্চ ২০১৮

রাস্তাত মাটি কাটি টিনের ঘর কোনা করছুক বাবা। মানসি (মানুষ) সবাই মাছ-গোস্ত খাইছে, মুই (আমি) না খেয়া এই টিনের ঘর করছুক। এলা একনা পেলাস্টিকও পাওনা ঘর ঘিরিবার। ওমা (স্বামী) গ্রামত ভিক্ষা করে খায়। এলা কী হবে হামার, থাকিমো কোনঠে?

স্থানীয় ভাষায় এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বুড়াসারডুবী গ্রামের প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী নমিনা (৫০)।

jagonews24

শিলা পাথরের আঘাতে এলাকার ক্ষয়ক্ষতি থেকে শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গেলে এ গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ওই প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক পরিবারে একটি মাত্র টিনের ঘর শিলার আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ভিক্ষুক আফাজ উদ্দিন (৭৫) প্রতিদিন গ্রামে ঘুরে ভিক্ষার টাকা জমান। আর স্ত্রী নমিনা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এরপর ভিক্ষার জমানো টাকায় ২ শতক জমির কিনে একটি টিনের ঘর করেন তারা। বর্তমানে ওই ঘরে থাকে তার স্ত্রী নমিনা ও বৃদ্ধা শাশুড়ি ওইচোন নেছা (৯০)।

ছেলে নুরনবী বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে গেছে। তাদের দেখার মতো বর্তমানে কেউ নেই। প্রতিদিন ভিক্ষা করে যে চাল পান আফাজ উদ্দিন তা দিয়েই তিনজনের খাবার জুটছে তাদের।

jagonews24

আফাজ উদ্দিন বলেন, আইজ ভিক্ষা করিবা যাও নাই, খাবারও জুটিবেনি একবেলার। ভিক্ষা করে অনেক কষ্টে টিনের ঘর করিনু, পাথরের আঘাতে ঘরটা ফুটা হয়ে গেইল। টিন কেনার আর উপায় নাই।

গতকাল শুক্রবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় শিলা পাথরের আঘাতে অসংখ্য টিনের ঘর, টিনের চালা, দোকনপাট, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসার ছাদ ফুটো হয়ে গেছে। শিলা বৃষ্টিতে উঠতি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শিলা বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলায় বড়খাতা ইউনিয়নের বড়খাতা, দোলাপাড়া ৬নং ওয়ার্ড, দোলাপাড়া ৭নং ওয়ার্ড, পশ্চিম সারডুবী, পূর্ব সারডুবী, ফকিরপাড়া ইউনিয়নের ১,২,৩নং ওয়ার্ডের বুড়াসারডুবী, বুড়াবাউরা, পশ্চিম ফকিরপাড়া, দালালপাড়া, সানিয়াজান ও নিজ শেখ সুন্দর গ্রামের ফসল।

jagonews24

পাটগ্রাম উপজেলার, ইসলামপুর, জোংড়া, বাউরা, জমগ্রাম ও ছিটজগ্রাম। কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর, চলবলা, চাকলা ও চাপারহাট। এছাড়া আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ও সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ওপরও শিলা বৃষ্টি আঘাত হানে।

ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, অত্র ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবারে টিনের ঘর ও ২০ হেক্টর ভুট্টা ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আগামীকাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসে পাঠাবো।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প ও বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহম্মেদ বলেন, শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য টিন বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। বরাদ্দ পেলে দ্রুত বিতরণ করা হবে।

রবিউল হাসান/এমএএস/আরআইপি

আরও পড়ুন