ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়ে বড় মেয়ের মরদেহ দেখতে এলেন মা
একদিকে ছোট মেয়ের বিয়ে অন্যদিকে বড় মেয়ের মরদেহ উদ্ধারের খবর। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না মা। শেষমেষ ছোট মেয়ের বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নারায়ণগঞ্জে বড় মেয়ের মরদেহ দেখতে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে স্থানীয়রা মরদেহ দাফন করে ফেলেছেন।
শুক্রবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানার কম্পাউন্ডে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ফতুল্লায় স্বামীর হাতে খুন হওয়া সেই রিমার মা জোসনা বেগম। জোসনা বেগমের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার সাধুপাড়া এলাকায়। রাতেই রিমা হত্যার ঘটনায় জোসনা বেগম বাদী হয়ে জামাই আলামিনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আলামিনের মা ও বোন হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে উল্লেখ রয়েছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরেই রীমার উপর তার স্বামী আলামিন, শাশুড়ি জোবেদা বেগম ও ননদ বুবলি মিলে অত্যাচার করছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
জোসনা বেগম জানান, ১ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে রীমা সবার বড়। ১৪ বছর আগে তাদের পরিবার ফতুল্লার কোতোয়ালের বাগ এলাকায় বসবাস করতো। ৩ বছর আগে একটি গার্মেন্টে কাজ করার সময় আলামিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে রীমার বিয়ে হয়। এরই মধ্যে রীমার পরিবার পাবনা চলে যান।
বিয়ের পর থেকে রীমার উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে আলামিন। শাশুড়ি জোবেদা বেগম ও ননদ বুবলিসহ স্বামী আলামিন মিলে রীমাকে মারধরের পাশাপাশি নির্যাতন করে চুল কেটে দেয়। এসব কারণে তিন মাস আগে রীমা তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। গত ২০ দিন আগে আলামিন ও তার বোন বুবলি মিলে পাবনা গিয়ে বুঝিয়ে রীমাকে নিয়ে আসে। তখন আলামিনের কাছে ২০ হাজার টাকাও দেয়া হয়।
জোসনা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার ২৯ মার্চ ছিল আমার ছোট মেয়ের বিয়ে। ১০ দিন আগে আমি ফোন করে রিমা ও তার স্বামীকে দাওয়াত দিই। তখন আমার মেয়ে রীমা জানান যে তার স্বামীর হাতে টাকা নাই। ১০ হাজার টাকাও পাঠাতে বলে। আমি সে টাকাও পাঠাই। কিন্তু বুধবার শুনি রীমেকে মেরে ফেলেছে। ছোট মেয়ের বিয়ের কারণেই পরিবারের লোকজনের ফতুল্লায় আসতে বিলম্ব হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজালাল জানান, নিহতের পরিবার শুক্রবার রাতে এসেছে। স্বামী আলামিনকে প্রধান আসামি করে নিহত রিমার মা জোসনা বেগম মামলা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কোতোয়ালেরবাগ এলাকার একটি বসত ঘর থেকে তালা ভেঙে রিমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘর তালাবদ্ধ দেখেছে তারা। রিমার মরদেহ উদ্ধারের সময় পাশেই বসা ছিল দেড় বছরের শিশু নাহিদ। তিনদিন মৃত মায়ের আঙ্গুল চুসে বেঁচে ছিল শিশু নাহিদ। দেড় বছরের শিশু তিনদিন কিভাবে মৃত মায়ের আঙ্গুল চুসে বেঁচে ছিল তা নিয়েই কৌতুহল সবার।
শাহাদাৎ হোসেন/এফএ/এমএস