ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের খপ্পরে শাবি অধ্যাপক, নাইজেরিয়ান আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিলেট | প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ৩০ মার্চ ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক অধ্যাপকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র।

প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ডোনাট্স এমেকা ওনিজিউয়া নামের এক নাইজেরিয়ান নাগরিককে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের মাধবপুরস্থ হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্ট থেকে আটক করেছে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল। এ ঘটনায় মহানগরের হজরত শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন শাবির অধ্যাপক ফারুক মিয়া।

শুক্রবার দুপুরে নগরের নাইওরপুলস্থ মহানগর পুলিশের সদর দফতরে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, সিলেট নগর পুলিশের উপ-কমিশনার ফয়সল মাহমুদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (হেডকোয়ার্টারস) রেজাউল করিম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) এম এ ওয়াহাব।

পরিতোষ ঘোষ আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুক মিয়ার কাছে গত ফেব্রুয়ারি একটি ইমেইল আসে। ওই ইমেইলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সেক্সুয়্যাল ট্রান্সমিটেড ডিজিস অ্যান্ড ইনফেকশন’ শীর্ষক একটি সেমিনারে অংশ নিতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সেমিনারে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ফিরতি মেইল পাঠান। এরপর কনফারেন্সে অংশ নেয়ার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হোটেলে ১০ দিনের রুম বুকিং দিয়ে বুকিং স্লিপ পাঠাতে বলা হয়। এ ব্যাপারে ড. ফারুক আয়োজকদের সহযোগিতা চাইলে রুম বুকিং বাবদ ৫০০ ডলার চায় তারা। ওই টাকা বেলজিয়ামে অবস্থানরত তার এক ছাত্রের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ করেন ড. ফারুক মিয়া।

এরপর গত ১ মার্চ একটি ইমেইলে অধ্যাপক ড. ফারুক মিয়াকে জানানো হয়, ১৯-২১ মার্চের জন্য তিনি আমেরিকার ভিসা পেয়ে যাবেন। ভিসা দেয়ার বিষয়টি ইউএসএ ইমিগ্রেশন সার্ভিস কনফার্ম করেছে বলেও আশ্বস্ত করা হয় তাকে। এজন্য তাকে পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসা ফি ১৬০ ডলার, ইন্সুরেন্স ফি ৯৫ ডলার এবং ফেরতযোগ্য জামানত ১৩৯৯ ডলার পরিশোধ করতে বলা হয়। জামানতের ১৩৯৯ ডলার সেমিনারে অংশ নিয়ে ফেরার সময় ওয়াশিংটন বিমানবন্দরে তাকে ফেরত দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয় ইমেইলে। ওই ইমেইল পাওয়ার পর অধ্যাপক ফারুক বেলজিয়ামে অবস্থানরত তার এক বন্ধুর মাধ্যমে ১৬৫৪ ডলার করে দুইবারে ৩৩০৮ ডলার পাঠান তাদের দেয়া ব্যাংক হিসেবে।

এরপর এক ইমেইলে কনফারেন্স প্যাকেজ, ভিসা অ্যাপ্রোভাল লেটার, ইউএস অ্যাম্বাসি অ্যাপয়নমেন্ট লেটার ও বিমান টিকেটসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হ্যান্ডেলিং বাবত ১৮০০ ডলার পাঠাতে বলা হয়। ওই টাকাও ফেরতযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয় ইমেইলে। ২৫ মার্চ ওই ডলারের সমমূল্যের টাকা তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন।

২৭ মার্চ ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি পেট্টল পাম্পের কাছে অধ্যাপক ফারুকের সঙ্গে দেখা করেন এক আফ্রিকান নাগরিক। সে তার গাড়িতে একটি লাগেজ তুলে দেয় এবং সেটি সিলেট নিয়ে এসে সেমিনার আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। লাগেজটি সিলেটে নিয়ে এসে ভেতরে ডিজিটাল লক করা একটি বাক্স দেখতে পান তিনি। কিন্তু লক করা থাকায় তিনি তা খুলতে ব্যর্থ হন।

পরদিন ২৮ মার্চ বিকেলে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে লাগেজটি নিয়ে গাড়িতে করে নগরের উপশহরস্থ হোটেল রোজভিউর কাছে একা আসতে বলে। সেখানে গিয়ে একজন নাইজেরিয়ানকে দেখতে পান অধ্যাপক ফারুক। নাইজেরিয়ান ব্যক্তিটি গাড়িতে ওঠে তাকে পাশ্ববর্তী একটি স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে লক করা বাক্সটি খুলে জাল ডলার তৈরির একটি মেশিন দেখায়। এ সময় সে দুইটি একশ ডলারের জাল নোট তৈরি করেও দেখায়।

এ সময় তিনি জাল নোট তৈরির মেশিন কেন তাকে দিতে চাইছে তা জানতে চান। এই মেশিন ফেরত নিয়ে সেমিনারে অংশ নেয়ার কাগজপত্র দিতে বললে তাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে হোটেলের দিকে যায় ওই নাইজেরিয়ান। এর কিছুক্ষণ পর সে মোবাইল বন্ধ করে দিলে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশকে জানান।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানান, তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের মাধবপুরস্থ হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্ট থেকে ওই নাইজেরিয়ান নাগরিককে আটক করে পুলিশ।

ছামির মাহমুদ/আরএআর/পিআর

আরও পড়ুন