‘আজ থেকে তার পথের কাঁটা সরে গেল’
ফাহিম শাহরিয়ার। ত্রিশ বছরের টগবগে যুবক। আত্মবিশ্বাসী আর হাসিখুশি ফাহিম মানুষকে বিশ্বাস করতেন। আবার ঠকতেনও মানুষের কাছেই। ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব রিয়েল এস্টেট বিষয়ে লেখাপাড়া শেষ করেছেন। কাজ করতেন আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটিতে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে। মডেলিংও করতেন। শোবিজের রঙ্গিন দুনিয়াই যেনো তার পৃথিবী আঁধারের চাদরে ঢেকে দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ছড়াকার, শিশু সাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক জাহাঙ্গির আলম জাহানের ছেলে ফাহিম শাহরিয়ার। ফেসবুক আইডিতে তার নিজের বিষয়ে লেখা আছে ‘ মানুষকে অল্পতেই বিশ্বাস করি ধোঁকা খাই, তারপর বোকার মতো আবার মানুষকে বিশ্বাস করি।’
সেই বিশ্বাসই ফাহিমকে নিয়ে গেছে মৃত্যুর কাছে। মা মারা গেছেন দেড় মাসও হয়নি। এরই মধ্যে প্রেমিকার সঙ্গে অভিমান করে পৃথিবী ছারলেন ফাহিম। প্রেমিকার সঙ্গে অভিমান করে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছেন ফাহিম।
এর কিছুক্ষণ আগে রাত ১০টা ৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহিম। এতে লেখা হয়- ‘আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে আমার দুনিয়াটা অনেক ছোট হয়ে গিয়েছিল। আমার ভবিষ্যৎ চাওয়া পাওয়া বলতে যা ছিল আজ তাও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। স্বপ্ন দেখার মতো কিছু নেই। আমার জন্য এতোদিন যিনি মিডিয়াতে নিজের প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। আজ থেকে তার পথের কাঁটা সরে গেলো। দোয়া রইলো তার জন্য। উনি যেন সুপারস্টার হন তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে এই কামনাই করি। যদি কখনো কাউকে কোনো প্রকার কষ্ট দিয়ে থাকি তার জন্য সরি। ক্ষমা করে দিবেন সবাই। শেষ কথা হচ্ছে আমার জন্য কেউ যেন কাউকে দোষারোপ না করে। আমি যা করেছি আমি আমার নিজের চিন্তা ভাবনায় করেছি । আল্লাহ হাফেজ। ভালো থেকো দুনিয়ার মানুষেরা।’ এরপরই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আত্মহত্যা করে ফাহিম।
এর আগে ২৫ মার্চ রাত ১০টা ৪৩ মিনিটে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি ছোট স্ট্যাটাস দেয় ফাহিম। এতে লেখা ছিল- ‘প্রিয় কষ্ট, চল আমরা দু’জনে মিলে আত্মহত্যা করি।’
কষ্টকে নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। ফাহিমের মৃত্যুতে শোকে কাতর তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
জাহাঙ্গির আলম জাহানের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ফাহিম ছিল বড়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ফাহিমের মা রাশেদা আক্তার রেনুর মৃত্যু হয়। দেড় মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে স্ত্রী ও বড় ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ফাহিমের বাবা। পরিবারে কান্না থামছে না।
পরিবারের তথ্য মতে, ফাহিম ঢাকায় মোহাম্মদপুরের পুলপাড় এলাকায় থাকতেন। তিনি পুলিশ হাউজিং সোসাইটিতে চাকরির পাশাপাশি মডেলিং করতেন। সেই সূত্রে পরিচয় হয় নওরিন নামে এক মডেলের সঙ্গে। তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতেন ফাহিম।
ফাহিমের চাচা ছড়াকার ও মানবাধিকার কর্মী হারুন আল রশিদ জানান, নওরিন নামের এক মডেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ফাহিমের মায়ের মৃতুর পর মেয়েটি কিশোরগঞ্জে আমাদের বাড়িতেও এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি তার সঙ্গে ফাহিমের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। সোমবার সন্ধায় নওরিনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
তিনি আরও জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের রুমে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ফাহিম। পাশের কক্ষের লোকজন তাকে নামিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরএআর/পিআর