পদ্মার বুকে খুলছে স্বপ্নের দুয়ার
সহস্র জল্পনা কল্পনা ছাপিয়ে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। কু-আলোচনা, ষড়যন্ত্র আর হতাশা কাটিয়ে পদ্মা সেতুর ৪৫০ মিটার কাঠামো ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। ব্যাপক জোরেসরে চলছে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ। সেতু প্রকল্পের ব্যায় ও সেতু নির্মাণে সময় বৃদ্ধি, নদীর প্রতিকূল অবস্থা ও নকশা পরিবর্তন সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে পুরোদমে চলছে প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারে নতুন নকশায় একটি করে পাইল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া ৪র্থ স্প্যান স্থাপনের প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
সূত্র থেকে জানা যায়, পদ্মার তলদেশের গভীরে মাটি নরম থাকার কারণে ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের (পিয়ার) নকশার পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই চার পিলারের নিচে সাতটি করে পাইল বসছে। অন্যান্য পিলারের ন্যায় রেকিং ছয়টি পাইল এবং মাঝে ভার্টিক্যাল (সরাসরি সোজা) আরও একটি অতিরিক্ত পাইল স্থাপন হবে। তাছাড়া পাইলগুলোর দৈর্ঘ্য কমিয়ে ১২৮ মিটারের স্থলে ১১৪ মিটার করা হবে এবং ১৫, ১৯, ২৪, ২৫ ও ২৮ নম্বর পিলার গুলোতে একই নকশা অনুযায়ী ৭টি করে পাইল বসবে।
তাছাড়া একই সমস্যার কারণে পদ্মা সেতুর ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারে একই ডিজাইনে ৭টি করে পাইল বসবে। এই ১৩টি পিলারের দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নকশা এখনও দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, এই ২২টি পিলার ব্যতীত নদীর ১৮টি পিলারে পূর্বের নকশা অনুযায়ী ছয়টি করে পাইলই বসবে। পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিলারের মধ্যে ৪০টি পিলার হবে নদীতে। আর দু'টি হবে তীরে। আর তীরের দু’টি পিলারের নিচে ১৬টি করে পাইল বসছে।
এদিকে জাজিরার তীরের ৪২ নম্বর পিলারের নিচে ১৬টি পাইল বসানো হয়েছে। যার কাজ প্রায় সম্পন্ন। তবে মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিলারের ৩টি পাইলের কাজ সম্পন্ন। বাকি ১৩টি পাইল স্থাপনের কাজ চলছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক প্রকৌশলী জানান, পদ্মার তলদেশের মাটি নরম থাকার কারণে ১৪টি পিলার নিয়ে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আরো ৮টি পিলারের স্থানে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ১৫, ১৯, ২৪, ২৫ ও ২৮ নম্বর পিলারগুলো ছাড়া বাকি ১৩টি নকশা না পৌঁছলেও এর দৈর্ঘ্যসহ অন্যান্য সকল নির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। তাই পদ্মা সেতুর বড় চ্যালেঞ্জই সমাধান হয়ে গেছে। এই ২২টি খুঁটির ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী (পদ্মা সেতু প্রকল্প) দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এপ্রিলের শেষের দিকে ৪০-৪১ নং পিলারে (পিয়ার) ৪র্থ স্প্যান বসবে। তাই চতুর্থ স্প্যান স্থাপনের জন্য ৪১নং পিলার (পিয়ার) পুরোপুরি প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে ‘৭-ই’ নম্বরের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য স্প্যানটির রঙের কাজ চলমান রয়েছে।
অপরদিকে পদ্মায় অন্যান্য খুঁটিতে পাইল স্থাপনের কাজ জোরেসোরে চলছে। এরই মধ্যে পদ্মায় ১২৬টি পাইল পুরোপুরি বসে গেছে। আরও ৯টি পাইলের বটম সেকশন স্থাপন হয়েছে। পদ্মার তলদেশের মাটির সমস্যার কারণে অনেকগুলো পিলারের (পিয়ার) নিচে পাইলের নকশা পরিবর্তন হয়েছে। এ বিষয়ে জটিলতার সমাধান প্রায় সম্পন্ন। তাই সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একরকম উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
ভবতোষ চৌধুরী নুপুর/এফএ/এমএস