বিমান দুর্ঘটনা : ছেলের লাশ না পেয়ে পাগল মা
তোমরা আমার জ্যান্ত ছেলেকে এনে দাও। যদি না পারো, তবে মরদেহ এনে দাও। তা না পারলে পোড়া ছাই দাও। আমার বাবার পোড়া ছাই বুকে নিয়ে আমি ঘুমাবো।
বিমানে পুড়ে যাওয়া ছেলের মরদেহের ছাই পেতে এমন আহাজারি করছেন খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতীর আলিফুজ্জামান আলিফের মা মনিকা বেগম। তার এমন আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
পাগলের মতো পথেঘাটে যখন যাকে পাচ্ছেন সবার কাছে একই আকুতি জানিয়ে চলছেন তিনি। কয়েক বার মূর্ছা গেছেন। সবশেষ ছেলের মরদেহ না পেয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন মা মনিকা বেগম।
গত সোমবার (১২ মার্চ) নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হওয়া ৪১ জনের মধ্যে একজন হলেন আলিফ।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত সোমবার নিহত বাংলাদেশিদের অনেকের মরদেহ আসে বাংলাদেশে। কিন্তু আসেনি আলিফের মরদেহ।
স্বজনরা নেপালে গিয়েও খুঁজে পায়নি খুলনা বিএল কলেজের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আলিফের মরদেহ। বিমান দুর্ঘটনার পর ভাগ্নের খোঁজে তার মামা শাহাবুর রহমান ছুটে যান নেপালে। যে আশা নিয়ে গিয়েছিলেন তাতে কোনো লাভ হয়নি। নিরাশ হয়ে ফিরে এসেছেন তিনি।
আর সেই সময় থেকেই আলিফের মায়ের এই আকুতি। তার কান্নায় ধরে রাখতে পারেনি অনেকের চোখের জল। দুর্ঘটনায় নিহত আলিফুজ্জামানের মা মনিকা এখন পাগলপ্রায়।
সোমবার আর্মি স্টেডিয়ামে ছেলের মরদেহ না পেয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন আলিফের মা। যাকে পাচ্ছেন, তাকেই জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছেন।
তিন ভাইয়ের মধ্যে আলিফ ছিলেন দ্বিতীয়। যে স্বপ্ন নিয়ে আকাশে উড়েছিল তা নামার আগেই পুড়ে গেল। এখন পোড়া মরদেহের চিহ্নও মিলছে না। নেপালে এখন পর্যন্ত হতভাগা যে তিনজনের মরদেহ শনাক্ত হয়নি তাদেরই একজন আলিফ। সামনের এপ্রিল মাসেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার। মেয়েও দেখা আছে। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে।
আলিফের মামা শাহাবুর রহমান বলেন, যে তিনজনের মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি তাদের একজন আলিফ। চেহারা দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনএ টেস্ট করার পরেই হয়তো মরদেহ শনাক্ত করা যাবে।
আলমগীর হান্নান/এএম/এমএস