প্রিয়ক-প্রিয়ংময়ী ফিরলেন, তবে কফিনবন্দি হয়ে
গাজীপুরের শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামের ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেহেদী হাসানের পরিবারের পাঁচ সদস্য নেপালে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হন। এদের মধ্যে অলৌকিকভাবে তিনজন বেঁচে গেলেও নিহত হন প্রিয়ক ও প্রিয়কের কন্যা প্রিয়ংময়ী তামাররা (৩)। তাদের মরদেহবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স সন্ধ্যা ৭টা ৫৬ মিনিটে নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
প্রিয়ক ও প্রিয়ংময়ীকে শেষবার দেখতে তাদের বাড়িতে ভিড় করেছেন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী। বাড়িতে হাজারও লোকের সমাগম থাকলেও নেই কোনো কোলাহল। সবাই যেন শোকে স্তব্ধ। কারও মুখে কোনো কথা নেই। এক প্রিয়ক-প্রিয়ংময়ী যেন কেড়ে নিল হাজারও মানুষের মুখের ভাষা।
মা ফিরোজা বেগম তার একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন প্রিয়ককে বাড়ি থেকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিলেন। আরেক মা আলমুন নাহার এ্যানীর সামনে বিমান দুর্ঘটনায় সন্তান মারা গেছে গত সাত দিন হলো। দুই মায়ের সন্তান আজ একসঙ্গেই বাড়ি ফিরেছে, তবে কফিনবন্দি হয়ে। মায়ের বুক খালি করে যাওয়া শিশু প্রিয়ংময়ী বাবার সহযাত্রী হয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
স্বামী-সন্তানের কফিন নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করছিলেন না প্রিয়ংময়ীর মা আলমুন নাহার এ্যানি। রাত ঠিক ৭টা ৫৬ মিনিটে ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেয়ে প্রিয়ংময়ী তামাররা মরদেহ মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন বাড়িতে এসে পৌঁছে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় প্রিয়ংময়ীর মা এ্যানী শুধু একটি কথায় বলেন, তোমরা আমার মেয়েকে এনে দাও। আমি আর কিছু-ই চাই না। মা তামাররা তুমি কোথায়? এসব বলেই অচেতন হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ফারুকের স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানী।
এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় স্বামী-সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য এ্যানীকে ঢাকা মেডিকেল থেকে শ্রীপুরের নিজ বাড়িতে আনা হয়। বাড়িতে আনার পর তাকে স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। এমন সংবাদ শোনার পর থেকে এ্যানী অন্যরকম হয়ে পড়েছেন। এ্যানীর ফ্যালফ্যাল চাহনি ও কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন। বাকরুদ্ধ এ্যানী সারাদিন কোনো খাবাব খাননি, কারো কোনো কথার জবাবও দেননি।
এদিকে সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে বাবা ও মেয়ের লাশের কফিন বাড়িতে ঢোকা মাত্রই স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে আসে। মা ফিরোজা বেগমের আর্তচিৎকারে সবার চোখ অশ্রুসজল হয়ে যায়। তবে এমন ঘটনায় কারও যেন সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আর অবশিষ্ট নেই।
উল্লেখ্য, নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে গত ১২ মার্চ দুপুরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে গাজীপুরের শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামের ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেহেদী হাসানের পরিবারের পাঁচ সদস্য ছিলেন। বিমান থাকা পাঁচ সদস্য হলেন- শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামের মৃত শরাফত আলীর ছেলে ফারুক আহমেদ (৩২), তার স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি (২৫), তাদের এক মাত্র সন্তান প্রিয়ংময়ী তামাররা (৩) ও নগরহাওলা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান (৩৩) ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা আক্তার (২৫)। ফারুক পেশায় একজন ফটোগ্রাফার, মেহেদী হাসান পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। ফারুক ও মেহেদী হাসান সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই।
আমিনুল ইসলাম/আরএআর/বিএ