ঝড়ের ভয়ের দিন আসছে
আসছে ঝড়ের মৌসুম। আর আতঙ্ক বাড়ছে উপকূলীয় জেলা ভোলার চরাঞ্চলের মানুষের। পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় দুর্যোগ ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বসবাস করছেন তারা। এছাড়া যে সাইক্লোন শেল্টারগুলো রয়েছে সেগুলো পরিত্যাক্ত ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পর্যপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও রয়েছেন তারা।
বিশেষ করে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী চরাঞ্চলে দুই লাখ মানুষ বসবাস করে। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরের প্রায় ৮০ ভাগ বাসিন্দা ঝড়-বাদলে অরক্ষিত থাকলেও নিরাপত্তার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অবশ্য জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, চরাঞ্চলের অসহায় মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন করে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে ও মুজিব কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অব্যাহত নদী ভাঙনের কারণে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে দিন দিন জনবসতির সংখ্যা বাড়ছে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী অর্ধশতাধিক চরে প্রায় ২ লাখ মানুষ বাস করে। এর মধ্যে কলাতলীর চর, মাঝের চর, চর জহির উদ্দিন, চর নিজাম, মদনপুর, নেয়ামতপুর, হাজিপুর, চর নাসরিন, ডালচর, চর মোজাম্মেলসহ জনবসতি আছে এমন ২০টি চরে পর্যপ্ত কোনো আশ্রয়কেন্দ্র বা মাটির কিল্লা নেই। এই চরগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ যুগ যুগ ধরে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে।
ধনিয়া ইউনিয়নের জলিল মাস্টার জানান, জনসংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ না করায় আতঙ্ক দানা বাঁধছে মানুষের মনে। বর্তমান সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্রগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। তাই দ্রুত এগুলোর তালিকা করে সংস্কার করা উচিত। আর যেখানে জনবসতি বেশি সেখানে আরো সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন করা উচিত।
মদনপুরের লতু পাটোয়ারী জানান, উপকূলের উপর দিয়ে সিডর, আইলা, রেশমি, মহাসেন, রোয়ানুসহ অসংখ্য ঝড় বয়ে গেলেও উপকূলবাসীর জন্য আজও নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। এতে দুর্যোগকালীন সময় চরম অনিরাপদ হয়ে ওঠে দুই লাখের অধিক উপকূলবাসীর জীবন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপ-পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন জানালেন, চরাঞ্চলে যে পরিমাণ সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। সাইক্লোন শেল্টারের অভাবে মোট জনসংখ্যার অর্ধেককেই শেল্টারের বাইরে থাকতে হয়। তাই আরো প্রায় ২০০ সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা দরকার।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক জানান, চরাঞ্চলের বিপদগ্রস্ত মানুষদের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনার জন্য আমাদের প্রায় ৬০০ সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন চরে মুজিব কেল্লা তৈরি করা হবে।
সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে যেন নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ গৃহপালিত পশুপাখি রাখার সুব্যবস্থাও থাকে এখন থেকে সেরকম অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ৫০টি সাইক্লোন শেল্টার ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের সিডর, আইলা ও মহাসেন, রোয়ানুসহ ছোট-বড় অন্তত ২০টি ঝড়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তাই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করার দাবি উপকূলবাসীর।
আদিল হোসেন তপু/এফএ/জেআইএম