আমাকে দেখলেই লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে
বুকের উপর থেকে কাপড় তুলে ফেললেই মাছি ঘিরে ধরে। ঘায়ের গন্ধে বমি আসে। নিজেই নিজের গন্ধে থাকতে পারি না। বাড়ির বাইরে গেলে লোকজন আমাকে দেখে যেভাবে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় মনে হয় আমি ভয়ানক কোনো প্রাণি। এভাবে বাঁচা খুব কঠিন। ছেলেরাও চিকিৎসা করাতে পারছে না। পারবে কীভাবে, তাদের অভাবের সংসার। মৃত্যুর বয়স এখনও হয়নি, তবুও মেনে নিতে হচ্ছে যেকোনো সময় মারা যাব। এখন সেই অপেক্ষায় করছি।
এভাবেই বলছিলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর (ডায়া) গ্রামের হাছনা বেগম। তিনি ওই গ্রামের মৃত বাবু শেখের স্ত্রী।
একদিকে বিনা চিকিৎসার যন্ত্রণা, অন্যদিকে খেয়ে না খেয়ে অসহায়ভাবে দিন চলছে তার জীবন। তিনি বাড়ির বাইরে গেলেই এলাকার মানুষ তাকে দেখে সরে যায়। এতে তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩৫ বছর আগেই স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। ছোট ছোট ২ ছেলে-মেয়ে নিয়ে জীবন চালিয়ে এলেও এখন অসুস্থতার কাছে হেরে গেছেন হাছনা বেগম। ৪ বছর আগে বুকের উপর একটা ঘা হয়, সেখান থেকেই পচনের শুরু। প্রাথমিকভাবে টাকা না থাকায় এলাকার ডাক্তারের কাছে অপারেশন করেন হাছনা। ৬ মাস যেতে না যেতেই দিন দিন অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে তার। কিছুদিন পর এনায়েতপুরে একটি বেসকারি হাসপাতালে অপারেশন করেন। তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি হাসনার। এখন টাকা না থাকায় বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর যন্ত্রণা নিয়ে পড়ে আছেন তিনি। ঘায়ের কারণে তার শরীরের চারপাশে মাছি পড়াও শুরু হয়েছে। হাছনা বাইরে গেলে তাকে দেখে সবাই দূরে সরে যায়। তাই তিনি আর বাড়ির বাইরে যান না।
হাছনার ছেলে হাসেম শেখ জানান, আমি একা তাঁতের কাজ করে ৬ জনের সংসার চালাই। এই সংসার চালাতেই আমাকে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে কীভাবে চিকিৎসা করবো। আমার খুব কষ্ট হয় মাকে দেখে। কেউ আমার মায়ের কাছে আসে না। সবসময় একা একা থাকে। আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ঘুরেছি কেউ কোনো সাহায্য সহযোগিতা করেননি। অসহায় হাছনা বেগমকে সহযোগিতা করতে চাইলে (হাছনার ছেলে হাসেম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ০১৭৬৬-৮৮০৭৮০)।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক মামুন বিশ্বাস ফেসবুকে হাছনা বেগমের রোগ নিয়ে একটি পোস্ট দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। তিনি সেই পোস্টে দেশের বিত্তশালী মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
হাছনা বেগম জানান, আমার খুব কষ্ট হয় এই অবস্থায় থেকে। আমি বাঁচতে চাই। আমার পাশে এসে দাঁড়ান। আমি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই না।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এমএএস/এমএস