প্রথম বিমান ভ্রমণেই না ফেরার দেশে বিলকিস
স্ত্রীকে সঙ্গে হিমালয়কন্যা নেপাল ভ্রমণে যাচ্ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব হাসান ইমাম। কিন্তু অবসর ভ্রমণ তাদের জন্য কাল হলো। চলে গেলেন সবাই না ফেরার দেশে।
সোমবার নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা বিমানের যাত্রী ছিলেন তারা চারজন। বিধ্বস্ত হয়ে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে মারা যান তারা।
নিহত নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। বছরখানেক আগে তিনি অবসরে যান। তার স্ত্রী আক্তারা বেগম ছিলেন রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষিকা। তিনিও অবসরে যান মাস ছয়েক আগে। অবসর ভ্রমণ কাটাতে মূলত নেপালে যান তারা।
অন্যদিকে, নিহত হাসান ইমাম সর্বশেষ ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন। এর আগে তিনি শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। তিন বছর আগে তিনিও অবসরে যান। তার স্ত্রী হুরুন নাহার বিলকিস আরা নাটোরের গোপালপুর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা। তারা চারজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
হাসান ইমাম-হুরুন নাহার বিলকিস আরা শিরোইল এলাকার বাসিন্দা। শিরোইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন বহুতল ভবন জননীর ছয়তলার বি-ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন তারা। আর নজরুল ইসলাম-আক্তারা বেগম দম্পতি বাস করতেন নগরীর উপশহর এলাকার ১ নম্বর সেক্টরে।
এদের মধ্যে হাসান ইমাম-হুরুন নাহার বিলকিস দম্পতির দুই ছেলে কায়সার ইমাম ও তৌকির ইমাম। তারা দুইজনই কানাডা প্রবাসী। হুরুন নাহার বিলকিস আরার ভাই রাজশাহীর সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফারুক মো. আব্দুল মুনিম।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ১০ মার্চ সকালে সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে রাজশাহী ছাড়েন তারা। পরদিন তারা ইউএস-বাংলার ওই ফ্লাইটে নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুর্ঘনার খবর পেয়ে তার ছেলেরা দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বৃহস্পতিবার মরদেহ রাজশাহীতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নয় ভাই-বোনদের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন বিলকিস। আমার বোন বিমানে উঠতে ভয় পেতেন। এ কারণে তিনি কোনোদিন বিমানে ভ্রমণ করেননি। ছেলেরা বহুবার চেষ্টা করেও তার মাকে কানাডায় নিতে পারেননি। এটি ছিল তার প্রথম বিমান ভ্রমণ। যে ভয়ে আমার বোন বিমানে ছড়তেন না সেটিই তার ক্ষেত্রে ঘটলো।
অন্যদিকে, নজরুল ইসলাম-আক্তারা বেগমের দুই মেয়ে কাকন ও কনক। তারা ঢাকায় থাকেন। আক্তারা বেগমের ভাগ্নে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, কাকনের বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। কনক লেখাপাড়া করছে। রাজশাহীর বাড়িতে কেবল দুইজনেই থাকতেন। নেপালে যাওয়ার আগে তারা ঢাকায় মেয়ে কাকনের বাসায় উঠেছিলেন।
সোমবার দুপুরে ৭১ জন আরোহী নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি। ওই ফ্লাইটের মোট ৬৭ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ৩২ জনই বাংলাদেশের। আর ৩৩ জন নেপালের, একজন করে মালদ্বীপ ও চীনের নাগরিক ছিলেন।
ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজে ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৬৭ জন ছিলেন যাত্রী, বাকিরা ক্রু। তাদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ, ২৮ জন নারী এবং দুইজন শিশু। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫০ জন।
ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ ঢাকার শাহজালাল থেকে রওনা হয় বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে। নেপাল সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুতে নামার সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারালে উড়োজাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/এমএস