ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ৮ : নরসিংদীতে চলছে শোকের মাতম
নরসিংদীর গ্রামের বাড়িতে ঈদের আমেজ কাটিয়ে ছুটি শেষ হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মস্থলে আর ফেরা হলোনা শাহ আলমের। বন্ধু-বান্ধব আর স্বজনদের আগামী কোরবানি ঈদে মিলিত হওয়ার আশ্বাস দিয়ে এলেও গোটা পরিবার নিয়েই চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের অবৈধ রেলক্রসিংএ বহনকারী অটোরিকশাটি স্লিপারে আটকে গেলে ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় অকালেই ঝরে যায় ৮টি তাজা প্রাণ। এদিকে মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়লে চালকসহ নিহত ৮ জনের গ্রামে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে গ্রামের বাড়ি জিতরামপুরে আনা হয় নিহতদের লাশ। সকাল থেকেই চরাঞ্চল জিতরামপুর গ্রামের নারী-পুরুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করে মর্মান্তিক এ ঘটনায় নিহতদের এক নজর দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন তাদের বাড়িতে। স্বজনদের আহাজারিতে গোটা এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। লাশের কাফেলায় দাড়িয়ে স্বজনদের পাশাপাশি চোখের জল ধরে রাখতে পারছেননা দেখতে আসা গ্রামের মানুষগুলোও।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামের ফটিক মিয়ার ছেলে শাহ আলম (২৭), তার স্ত্রী পিয়ারা বেগম (২১), তাদের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (৭) ও মেয়ে সাদিয়া আক্তার (৪), পিয়ারার ছোট বোন তারিমুন ওরফে ছফুরা (১২), শাহ্ আলমের মামাতো ভাই লিটন মিয়া চুন্নু (২২), চাচাতো ভাই আল-আমীন (২৭) ও অটোরিকশা চালক সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের চর বাসিন্দা গ্রামের মোস্তাফা কামাল (২০)।
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের হায়দারাবাদে রেলক্রসিং পাড়াপারের সময় ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় তাদের মৃত্যু হয়।
নিহত শাহ আলম গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজারের খাইলকুর এলাকায় ফুফা মোসলেম উদ্দিনের বাসায় ভাড়া থেকে স্থানীয় এমএম গার্মেন্টে চাকরি করতেন।
নিহত শাহ আলমসহ পরিবারের ৬ সদস্যের লাশ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে গ্রামের বাড়ি জিতরামপুরে আনা হয়। একই সঙ্গে লিটন মিয়া চুন্নুকে গাজীপুরের টঙ্গী ও অটোরিকশাচালক মোস্তফা কামালের লাশ চর বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়।
শুক্রবার সকালে জিতরামপুর গ্রামের নিহত শাহ আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে সারি করে রাখা হয়েছে লাশ। সবার পরনেই ঈদের নতুন জামা। নিহত শিশু সাদিয়া ও তার মা-খালার হাতে ঈদে লাগানো টকটকে লাল মেহেদী। নতুন জামা আর হাতের মেহেদী রক্তে একাকার হয়ে গেছে।
বড় ভাই-ভাবি ও দুই ভাতিজা-ভাতিজির লাশ জড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন শাহ আলমের ছোট বোন মলি আক্তার সুমাইয়া। তিনি জানান, সকাল ১০টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে তারা ফিরছিল। একটি সিএনজিতে পরিবার নিয়ে শাহ আলম, তাদের ফুফাতো ভাই আল আমিন, প্রতিবেশী লিটন ও ভাবির ছোট বোন মিলে সাতজন এবং অন্যটিতে সে, আত্মীয় মাহমুদা, তামান্না ও আরো একজন ছিল। তাদের সিএনজিটি পিছনে পড়ে যায়। পরে এসে জানতে পারে ভাইয়ের সিএনজিটি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সবাই মারা গেছেন।
বিলাপ করে করে বোন মলি বলছিল, সবাই মিলে এক সঙ্গে ঈদ করে মনে আনন্দ নিয়ে এক সঙ্গে ফিরছিলাম। আসার আগে ভাই আত্মীয়দের বলে এসেছিল আবার কোরবানির ঈদে দেখা হবে। কিন্তু তা আর হলোনা’ !
শাহ আলমের মামাতো ভাই ইউসুফ আলী জানান, শাহ আলমরা তিন ভাই। ছোট দুইভাই বাড়িতে কৃষিকাজ করে। শাহ আলম তিন-চার বছর ধরে গাজীপুরে থেকে স্ত্রীসহ গার্মেন্টে চাকরি করে। সপরিবারে নিহত হওয়ায় তার আর কেউ রইল না। সকাল ১০টার দিকে বাড়ির সামনের মাঠে জানাজা শেষে দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।
সঞ্জিত সাহা/ এমএএস/পিআর