কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটি যেন সাত রাজার ধন
আনুমানিক ৫ দিন বয়সী নবজাতক শিশুটিকে ফেলে রাখা হয়েছিল একটি পুকুরের পাড়ে নির্জন স্থানে। কান্না শুনে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
জন্মদাতা বাবা-মায়ের কাছে হয়তো ফেলনা আর অসম্মানের মনে হয়েছিল শিশুটিকে। হয়তো কাজ করছিল সমাজ আর লোকলজ্জার ভয়। এমন অমানবিকতা মানুষই দেখিয়েছিল। তবে রাতের আঁধারে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশুটির স্থান মিলেছে মানুষেরই ঘরেই।
বিত্তবান এক দম্পতির ঘরে পরম মমতায় বেড়ে ওঠছে শিশুটি। তাদের কাছে এ যেন সাত রাজার ধন। এমন ফুটফুটে সন্তান পেয়ে ওই পরিবারে এখন বইছে খুশির বন্যা। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘মিহিরিমা’।
পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থেকে ফেলে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা নিষ্পাপ সেই নবজাতকের কথা। জন্মের পরই মানুষের নির্মমতার শিকার ওই শিশুকে নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘পুকুর পাড়ে কাঁদছিল ফুটফুটে শিশুটি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম-এ।
এরপরই তোলপাড় শুরু হয়। গত ৬ দিনে এই প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুরে অবস্থিত জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের পেছনে স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণের বাড়ির পারিবারিক পুকুরের পাড়ে একটি শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পায় স্থানীয়রা। শিশুটিকে অন্ধকারে মাটিতে ফেলে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী। খবর দেয়া হয় পুলিশে।
খবর পেয়ে বাজিতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান মজুমদার স্থানীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। সমাজসেবা বিভাগের উদ্যোগে উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে রাখা হয় স্থানীয় এক ব্যত্তির তত্ত্বাবধানে।
এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অনেকে শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। শিশুটিকে পাওয়ার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেন চারজন। অবশেষে ঢাকায় বসবাসরত এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দেয়া হয় শিশুটিকে।
বাজিতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জাগো নিউজকে জানান, শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে আগ্রহ দেখায়। এমনকি লন্ডন থেকে ফোন করে তাকে দত্তক নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
তিনি জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত মতে ঢাকার বনানী এলাকায় বসবাসরত এক বিত্তবান ব্যক্তির কাছে শিশুটিকে দত্তক দেয়া হয়েছে। ওই নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, শিশু আইন-২০১৪ অনুযায়ী উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশুটিতে ওই দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, সভার সিদ্ধান্ত মতে ৩০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা করে শিশুটিকে দত্তক দেয়া হয়। দত্তক নেয়া পরিবার শিশুটিকে ঠিকমতো লালন-পালন করছে কিনা, চুক্তির শর্ত পালন করা হচ্ছে কিনা- সেটি দেখার জন্য ‘উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের প্রোভিশন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
নূর মোহাম্মদ/এএম/এমএস